সাতক্ষীরার শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপহার দেয়া মুকুট চুরির ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) দিবাগত রাত ২টায় মন্দির পরিচালনা কমিটির পক্ষে জ্যোতি প্রকাশ চট্রোপাধ্যায় বাদী হয়ে শ্যামনগর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন।ডিবি পুলিশ মামলাটি তদন্তে করবে।
আটককৃতরা হলেন, মন্দিরের পুরোহিতের সহকারী অপুর্ব সাহা (৩৭), সঞ্জয় বিশ্বাস সাজু (৪০), পরিচ্ছন্নতাকর্মী রেখা রানী সরকার (৪২) ও পারুল বিশ্বাস (৪১)।
মামলার এজাহারে বাদী জ্যোতি প্রকাশ চট্টোপাধ্যায় উল্লেখ করেন, যশোরেশ্বরী মন্দির একটি তীর্থস্থান। ১৮০৯ সাল থেকে তাদের পূর্বপুরুষরা মন্দিরটি পরিচালনা করছেন। ২০২১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মন্দির পরিদর্শনকালে দেবীর মাথায় রূপার উপর সোনার জলের রঙ করা একটি মুকুট পরিয়ে দেন। প্রায় ৩০ ভরি ওজনের উক্ত মুকুটের মূল্য প্রায় এক লাখ টাকা।
মামলার এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, পুরোহিত দিলীপ ব্যানার্জীর কাছে মন্দিরের চাবি থাকে। তবে পরিচ্ছন্নতার জন্য মাঝেমধ্যে রেখা রানীকে পুরোহিত চাবি হস্তান্তর করেন। এমন এক অবস্থায় গত ১০ অক্টোবর আগত ভক্তদের সেবা দেয়ার সময় মন্দিরের চাবি খুলে কাজের সময় পরিচ্ছন্নতা কর্মী রেখা অসাবধানতাবশত বাইরে চলে যায়। পরক্ষণে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা দেবীর মাথা থেকে মুকুট খুলে নিয়ে পালিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে শ্রী শ্রী যশোরেশ্বরী সার্বজনীন কালী মন্দির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ঈশ্বরীপুর গ্রামের স্বপন কুমার সাহা জানান, আমরা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে এ কমিটির অনুমোদন নিয়েছি। মন্দিরটি লুটিপুটে খাচ্ছে দুই ভাই জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় এবং তার ছোট ভাই জ্যোতি চট্টোপাধ্যায়।তারা মন্দিরের জায়গা জমি বিক্রি করে সাবাড় করে দিয়েছেন। এই মন্দির থেকে পূজার প্রণামি সহ সকল উপার্জন তাদের মনোরঞ্জনে ব্যয় হয়। এ নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। এখানে সাধারণ হিন্দুদেরকোন অধিকার নেই। তিনি আরো বলেন, মন্দিরের পুরোহিত দিলীপ মুখার্জী জয়ন্ত এবং জ্যোতি চট্টোপাধ্যায়ের হাতের পুতুল । ঘটনার পিছনে এই তিনজনের ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। আসলদের বাদ দিয়ে লোক দেখানো গ্রেফতার করা হয়েছে। মন্দিরের পুরোহিত দিলীপ মুখার্জী, জয়ন্ত ও জ্যোতি চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতার দাবী করছি।
বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ শ্যামনগর উপজেলা শাখার আহবায়ক অনাথ মন্ডল জানান, মন্দিরের পুরোহিতের আচরণ রহস্যজনক। মুকুট চুরির ঘটনা ঘটার পরেও তিনি হিন্দুদের জানাননি।
শ্যামনগরে মহারাজা প্রতাপাদিত্য স্মৃতি রক্ষা পরিষদের সভাপতি প্রধান শিক্ষক জয়দেব বিশ্বাস জানান, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় এবং জ্যোতি চট্টোপাধ্যায় মন্দিরটি কুক্ষিগত করে রেখেছে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা অনেক মিটিং মিছিল মানববন্ধন এবং সমাবেশ করেছি। এরা ঢাকায় থাকেন। পুরোহিত দিলীপ মুখার্জীকে দিয়ে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেন। জয়ন্ত, জ্যোতি এবং পুরোহিত এ ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকতে পারে।
শ্যামনগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফকির তাইজুর রহমান বলেন, শনিবার রাতে মামলা দায়েরের পর বিষয়টি ডিবি তদন্ত করছে। ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তারা চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজের যুবককে সনাক্ত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।