চীন তার প্রযুক্তি দিয়ে এবার ফের একবার বিশ্বকে অবাক করতে চলেছে। তাদের এই নতুন কাজের ফল কী হতে পারে তা নিয়ে চিন্তিত বাকি দেশগুলো।
সাগরের নিচে পৃথিবীর প্রথম স্থায়ী গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণ করছে চীন। মূলত সাগর থেকে মিথেন উত্তোলনের পরিকল্পনা থেকে গত ১ মার্চ এই মেগা প্রজেক্ট শুরু করা হয়েছে। পরিকল্পনাটি সফল হলে দেশটি যে পরিমাণ জ্বালানির মালিক হবে, তা পারস্য উপসাগরের তেল মজুদকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। এই তেল পেয়ে গেলে চীন তেলের বিশ্ববাজারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
আনুমানিক ৮০ বিলিয়ন টন জ্বালানি তেলের সমান শক্তিশালী মিথেন বরফে সঞ্চিত রয়েছে। এটি পারস্য উপসাগরের ৫০ বিলিয়ন টন প্রমাণিত জ্বালানি তেলের মজুদের চেয়েও বেশি। মিথেনসমৃদ্ধ বিশাল হাইড্রেট মজুদ পৃথিবীজুড়ে জ্বালানির হিসাব-নিকাশকে একেবারে বদলে দিতে পারে।
কাজটিকে তারা কোল্ড স্লিপ জোন হিসেবে নাম দিয়েছে। গভীর সমুদ্রে মিথেনসমৃদ্ধ ওই শীতল অঞ্চলে স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এই গবেষণাগারে ছয়জন বিজ্ঞানী থাকবেন। অর্থাৎ পানির নিচে থাকার সমস্ত ধরনের ব্যবস্থা করা হবে এখানে।
২০৩০ সালের মধ্যে কাজ শুরু করার জন্য তা প্রস্তুত হবে। সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রকল্পটি গবেষণার চেয়েও বেশি কিছু। কারণ দক্ষিণ চীন সাগর চীনের জন্য একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অঞ্চল, একটি সামরিক হটস্পট। এমন স্থানে শক্তির এতবড় সম্ভাবনাময় উৎসের খোঁজে অভিনব স্থাপনা নির্মাণ অবশ্যই একটি কৌশলগত পদক্ষেপ।
দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের ভাগ নিয়ে ফিলিপাইনের আপত্তি আছে। বিরোধ মামলা-মোকদ্দমা পর্যন্ত গড়িয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সেখানে প্রভাব খাটায়। কোনোকিছু দাবি না করে বরং দক্ষিণ চীন সাগরের মধ্য দিয়ে যুদ্ধজাহাজ পাঠায়। চীনের সার্বভৌমত্বের দাবির বিরুদ্ধে এমন কার্যকলাপকে দেশটি ‘নৌচলাচলের স্বাধীনতা’ বলতে চায়।
সমুদ্রের তলদেশে বরফে আটকে থাকা গ্যাস হাইড্রেট – মিথেন নিয়ে চীনের এত আগ্রহ কেন?
কয়লার চেয়ে মিথেন আরও সুন্দরভাবে পোড়ে। কয়লার তুলনায় মিথেন থেকে প্রায় অর্ধেক কার্বন ডাই অক্সাইড বের হয়। এটি চীনের কয়লানির্ভরতা কমাতে পারে।
তাছাড়া বর্তমানে চীনের তেল আমদানির ৮৫ শতাংশ আসে মালাক্কা প্রণালি দিয়ে। মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে ওই সরু জলপথটি চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের মতো চীনবিরোধীরা সংঘাতের সময় বন্ধ দিতে পারে। তাই নিজস্ব মিথেন সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে দেশটি ওই কৌশলগত দুর্বলতা কমাতে পারবে।
‘আগুনে বরফ’ হিসেবে পরিচিত, গ্যাস হাইড্রেট হিমায়িত অবস্থায় আয়তনের ১৬০ গুণ বেশি মিথেন সঞ্চয় করতে পারে। পৃথিবীজুড়ে এভাবে যে পরিমাণ মিথেন সঞ্চিত আছে, তা এখন পর্যন্ত পাওয়া সমস্ত জীবাশ্ম জ্বালানির মজুদের দ্বিগুণ শক্তি ধারণ করছে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা।
কিন্তু তাপমাত্রা এবং চাপের পরিবর্তনের প্রতি গ্যাস হাইড্রেট খুব সংবেদনশীল। এই উৎস থেকে জ্বালানি উত্তোলন আর বিস্ফোরক নিয়ে নাড়াচাড়া করা একইরকম বিপজ্জনক। দুর্ঘটনা ঘটলে সাগরতলে ভূমিধস ঘটতে পারে। কিন্তু শক্তির বিশাল মজুদের পাশাপাশি দক্ষিণ চীন সাগরে এমন সব খনিজ সম্পদ রয়েছে, যা ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং নৌ প্রযুক্তির মতো সামরিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ। তাই তো চীন সাগরতলেই বাজি ধরছে।