সর্দি ঝাড়লে আরাম লাগে, নিঃশ্বাস নিতে সুবিধা হয়। তবে নাক জোরে ঝাড়লে হিতে বিপরীত হতে পারে।
এই তথ্য জানিয়ে সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো’তে অবস্থিত ‘রাশ ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার’য়ের ‘রাইনোলজিস্ট’ ডা. পিটার ফিলিপ বলেন, “মানুষের নাক দিনে সাধারণত এক থেকে দুই লিটার শ্লেষ্মা তৈরি করে। যখন সর্দি লাগে তখন শ্লেষ্মা ঘন হয়ে ভাইরাস ফাঁদে আটকে রাখতে চেষ্টা করে। আর সেই ঘন শ্লেষ্মা ঝাড়লে আরাম বোধ হয়।”
তবে বেশি জোড়ে নাক ঝাড়ার ব্যাপারে সাবধান থাকতে বলেন এই চিকিৎসক।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, “নাক ঝাড়লে সাময়িক আরাম দেয়। তবে এই কাজটা খুব জোর দিয়ে করলে, কিছু পরিমাণ সর্দি বা তরল শ্লেষ্মা পেছনের দিকে নিঃসৃত হয়ে সাইনাসে চলে যেতে পারে। কারণ জোরে নাক ঝাড়তে গিয়ে জোরে নিঃশ্বাসও টানা হয়।”
ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জিনিয়া হেল্থ সায়েন্সেস সেন্টার’য়ের ২০০০ সালের গবেষণায় এরকম তথ্যই পাওয়া গিয়েছে। গবেষকরা মানুষের নাকের মধ্যে রং প্রবেশ করিয়ে নাক ঝাড়তে বলেন।
তারপর সেই রং অনুসরণ করে গবেষকরা দেখতে পান, জোরে ঝাড়ার কারণে নাকের ফুটা থেকে রং সাইনাসে প্রবেশ করেছে।
ডা. ফিলিপ বলেন, “নাকে পেছনের দিকে শ্লেষ্মা যাওয়ার কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।”
হতে পারে কানে ব্যথা
ক্যালিফোর্নিয়া’র নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ডা. কানওয়ার কেলি একই প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করেন, “নাকে পেছনে দুই কানের সাথে চিকন নল দিয়ে সংযোগ স্থাপন করা আছে। সাইনাসের তরল এই নল দিয়ে কানে চলে যেতে পারে যদি বেশি জোরে নাক টানা ও ঝাড়া হয়। ফলে ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাস কানে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।”
নাক থেকে রক্ত পড়া
জোরে ঝাড়ার কারণে নাকের রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে হতে পারে রক্তপাত। এছাড়া অতিরিক্ত নাক ঝাড়ার কারণে নাকের ভেতর অস্বস্তি, ছিলে যাওয়া অনুভূতি হয়- বলেন ডা. ফিলিপ।
নেইজল ভেস্টিবুলাইটিস
এটা হল ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ যা নাকে ফুটার ভেতর সামনের অংশে ব্রণের মতো তৈরি করে।
ডা. কেলি বলেন, “জোরে নাক ঝাড়ার কারণে নাকের সামনের অংশে ছিলে যেতে থাকে, যেখানে ব্যাক্টেরিয়া বংশবিস্তার করার সুযোগ পায়। ফলে দেখা দেয় সংক্রমণ।”
অর্বিটাল ফ্র্যাকচার
হওয়ার সম্ভাবনা কম হলেও, জোরে নাক ঝাড়া ও টানার কারণে নাকের ভেতরের গঠনে ফাঁটল ধরতে পারে। এমনকি চোখের ভেতরের দিকে ঢুকে দৃষ্টিশক্তিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।
মাথাব্যথা
ডা. ফিলিপ বলেন, “এমনিতেই ঠাণ্ডা-সর্দি লাগলে মাথাব্যথা হয়। এই অবস্থা আরও খারাপ করে দিতে পারে জোরে নাক ঝাড়ার কারণে।”
কারণ এই কাজের ফলে সাইনাসে অতিরিক্ত চাপ পড়ে।
নাক ঝাড়ার সঠিক পন্থা
ডা. কেলি বলেন, “এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয় এড়াতে হালকা ভাবে নাক ঝাড়তে হবে।”
তিনি পরামর্শ দেন, নাকের একদিকের ফুটা আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরে অন্য ফুটার সর্দি হালকা ভাবে ঝাড়তে হবে। বিপরীত ফুটার ক্ষেত্রেও একই কাজ করতে হবে। এতে সর্দি ঝাড়ার সময় নাকের ভেতর বাতাস ঢোকার সুযোগ থাকে না। ফলে সাইনাসেও শ্লেষ্মা যেতে পারে না।
আর নরম, ভেজা টিস্যু ব্যবহার করতে হবে। যাতে নাকের ভেতরে ও বাইরে অংশ ছিলে না যায়।
অন্যান্য উপায়
বন্ধ নাক খোলার ভালো একটি পদ্ধতি হল স্যালাইন পানি ব্যবহার করা।
ডা. ফিলিপ বলেন, “লবণ-পানির মিশ্রণ নাক-বন্ধভাব দূর করতে পারে। কমায় শ্লেষ্মা, ব্যাক্টেরিয়া এবং অন্যান্য অস্বস্তি।”
সাধারণ ঠাণ্ডায় বা সর্দি-কাশিতে লবণ পানি দিয়ে গার্গল করা উপকারী। আর নাকে ছিটা দিয়ে সর্দি হালকা ভাবে ঝেড়ে ফেলা সহজ হয়।
এছাড়া ‘নেইজল ইনহেলার’ বন্ধ নাক খোলার ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে।