বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৩ বছর পূর্তি আজ। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে আওয়ামী লীগ। প্রায় দুই বছর করোনা নামক নজিরবিহীন এক মহামারি থমকে দিয়েছে পুরো বিশ্বকে, উন্নয়নের মহাসড়কে ছুটতে থাকা বাংলাদেশকেও এ সংকট নাড়িয়ে দিয়েছে; তবে বাংলাদেশ পথ হারায়নি।
দেশ আজ উন্নয়ন-সমৃদ্ধির মহাসোপানে। দেশ এগিয়ে চলেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের পথে। জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের মানদণ্ড অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের মতে, অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা আর অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলার সূচকেও অনন্য অর্জন রয়েছে বাংলাদেশের। অর্থনৈতিক ও সামাজিক অনেক সূচকে ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনামসহ পৃথিবীর বহু দেশকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। শুধু তা-ই নয়, একসময় বৈদেশিক সহায়তা ছাড়া চলতে না পারা বাংলাদেশ এখন নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন করছে। এছাড়া মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র, এক্সপ্রেসওয়ের মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নেও বাংলাদেশ তার সক্ষমতা প্রমাণ করছে। খাদ্যেও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। আর দেশের এই বিস্ময়কর সাফল্যের কারিগরই হচ্ছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বাধীনতার পর যে দেশটিকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে কটাক্ষ করা হয়েছিল, সেই বাংলাদেশ আজ গোটা বিশ্বের সামনে এক বিস্ময়ের নাম। যে দলটির নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্থান পায় বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন দেশ হিসেবে, সেই দলটির হাত ধরেই গত ১৩ বছরে বিস্ময়কর গতিতে ঘুরে দাঁড়ানো, উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে বিশ্বস্বীকৃতি আদায়কারী দেশটির নাম এখন বাংলাদেশ। গত ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের উচ্চতর কমিটি স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি শ্রেণি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ করে। আর গত ২৪ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ তা অনুমোদন করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া স্বল্পোন্নত বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে থেকে এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা ১৩ বছর অবকাঠামো উন্নয়নে, বিশেষত বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে সাফল্য দেখিয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। ঢাকাবাসী ইতিমধ্যে মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচল দেখেছে। চলতি বছর এই ট্রেন যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম টানেলও চালু হবে চলতি বছর। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি অঞ্চলে উৎপাদন শুরু হয়েছে। উদ্বোধন করা হয়েছে পায়রা বন্দর সেতু; যা দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে দেশের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৮৮ ডলার, যা ছিল বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। সর্বশেষ হিসাবে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৫৪ ডলার। গত ১০ বছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উত্পাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে গড়ে ৬ শতাংশের বেশি। করোনা মহামারির মধ্যেও গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। টানা গত ১৩ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া শেখ হাসিনার ক্লান্তিহীন পরিশ্রম, দেশপ্রেম, সততা-নিষ্ঠা ও সাহসিকতার সঙ্গে দেশ পরিচালনার কারণেই বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থান সম্ভব হয়েছে। পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথ ধরেই তার কন্যা শেখ হাসিনা দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন উন্নয়নের মহাসোপানে। বর্তমানে সারা দেশে চলছে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ।
১৩ বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। আজকের বাংলাদেশ আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশ। করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারিতে গত দুই বছরে বিশ্বব্যবস্থা টালমাটাল। অথচ করোনার মধ্যেও প্রতিটি ক্ষেত্রে রেকর্ড গড়ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২.৩ বছর, ভারতে ৬৯.৪ এবং পাকিস্তানে ৬৭.১ বছর। মানবসম্পদ উন্নয়নসহ আরো অনেক সূচকে ভারত-পাকিস্তানের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। দারিদ্র্যের হার নেমে এসেছে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে। স্বাধীনতার পর ২০০৯ সাল পর্যন্ত চার দশকে বিদ্যুৎ উত্পাদনক্ষমতা বেড়েছে ৫ হাজার মেগাওয়াট। গত ১৩ বছরে তা ২৫ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। বিদু্যতের আলোয় আলোকিত প্রায় ৯৯.৯৯ ভাগ মানুষ। সারা দেশে ৩৯টি হাই-টেক পার্ক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন করা হয়েছে। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে রপ্তানি আয় ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
পিএসএন/এমঅাই