তিন দফা বৈঠকের পর অবশেষে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে ১৪ টাকা বাড়াল সরকার। এতে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৭৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৮৯ টাকা। গতকাল মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সভাপতিত্বে ভোজ্যতেলের আমদানি, সরবরাহসহ সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
গতকাল কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নতুন দরে তেল বিক্রি শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা, বিশেষ করে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েল নতুন দরে বিক্রি হচ্ছে। যদিও বোতলজাত তেলের মোড়কে দর লেখা থাকায় আগের দামেই কেনা গেছে এক ও দুই লিটারের বোতল। তবে সরকার দাম বাড়াবে– এমন ধারণা থেকে বাজারে পাঁচ লিটার বোতলের সরবরাহ কমিয়ে দেয় তেল বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স নতুন দাম উল্লেখ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯২২ টাকা, যা ছিল ৮৫২ টাকা। বোতলজাত তেলের পাশাপাশি খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি লিটার ১৬৯ টাকা, যা এতদিন ছিল ১৫৭ টাকা। অর্থাৎ খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলে লিটারে বেড়েছে ১২ টাকা।
গত ২৭ মার্চ ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেন মিল মালিকরা। ৩১ মার্চ ভোজ্যতেলের কর সুবিধার মেয়াদ শেষ হওয়ায় পরদিন ১ এপ্রিল থেকে দাম বাড়ানোর দাবি জানান তারা। তবে সরকার তাতে সায় দেয়নি।
গতকালের বৈঠকে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ভোজ্যতেলে মাসে প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে রমজান উপলক্ষে সরকার প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব অব্যাহতি দিয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববাজার ও ট্যারিফ কমিশনের ফর্মুলার ভিত্তিতে ভোজ্যতেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এ দর পর্যালোচনার ফর্মুলা অনুসারে তেলের দাম হয় প্রায় ১৯৭ টাকা। তবে শিল্পের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিভিন্ন দল ও সংগঠনের প্রতিবাদ
সয়াবিন তেল ও নতুন শিল্পে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
গতকাল পৃথক বিবৃতি ও বিজ্ঞপ্তিতে এসব বক্তব্য দিয়েছে জামায়াত ও এনসিপি। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বিবৃতিতে বলেছেন, নতুন শিল্পে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি শিল্প উদ্যোক্তাদের আশাহত করেছে। ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরে দেশের অর্থনীতিতে সুবাতাস বইছে। অনেকেই নতুন শিল্পকারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এ শিল্পে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত সরকারের অপরিণামদর্শিতা ছাড়া কিছুই নয়। সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্তে দরিদ্র জনগণের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।
এনসিপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কয়েক দিন ধরে চালের দামেও অস্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে, যা জনদুর্ভোগ তৈরি করছে। রমজানে নিত্যপণ্য ও শাকসবজির দাম স্থিতিশীল থাকায় স্বস্তি ছিল। হঠাৎ তেলের মূল্যবৃদ্ধি জনদুর্ভোগকে ত্বরান্বিত করবে। শুধু ব্যবসায়ীদের দাবিতে নয়, ভোক্তা সংগঠন ও শ্রমজীবী নাগরিকের মতামত এবং অংশগ্রহণের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ হবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও ন্যায্য।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বিবৃতিতে বলেছেন, তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি একদিকে জনজীবনে সংকট বাড়াবে। অন্যদিকে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট প্রশ্রয় পাবে। অতীতের সরকারের ধারাবাহিকতায় অন্তর্বর্তী সরকারও মুক্তবাজার অর্থনীতির ধারা অব্যাহত রেখে চলেছে, যা সাধারণ মানুষের স্বার্থবিরোধী।
যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম নান্নু আরেক বিৃবতিতে তেল-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে কঠিন আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দিয়েছেন।