মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ সময় আর সুস্থতা। মহামূল্যবান এই সময় থেকে কতটুকু উপকৃত হতে পেরেছি তা আমরা কখনো হিসাব করি না। কী অর্জন করতে পেরেছি খোদাপ্রদত্ত সুস্বাস্থ্য থেকে তা কখনো ভাবী না।
মহানবী (সা.) বলেন, অধিকাংশ মানুষ দুটি বিষয়ে প্রতারিত হচ্ছে, সুস্থতা এবং অবসর সময়। (বুখারি) ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (স.) বলেন, পাঁচটি আপদ আসার আগে পাঁচটি সুযোগের মূল্যায়ন কর- বার্ধক্য আসার আগে যৌবনের, অসুস্থতার আগে সুস্থতার, অভাবের আগে সচ্ছলতার, ব্যস্ততার আগে অবসরের এবং মৃত্যু আসার আগে জীবনের। (মুসতাদরাক) অন্য হাদিসে তিনি বলেন, ‘বিচার দিনে কোনো বান্দা পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ছাড়া পা সামনে বাড়াতে পারবে না। জীবন কোথায় ধ্বংস করেছে, যৌবন কোথায় বিলীন করেছে, সম্পদ কীভাবে অর্জন করেছে, কোথায় ব্যয় করেছে এবং জ্ঞান দ্বারা কী করেছে? (তিরমিজি)
এই মাত্র যা অতীত হয়ে গেল তা সময়। এখন যে মুহূর্ত অতিক্রম করছি তা-ও সময়। কিছুক্ষণ পর যা অতিক্রম করব তা-ও সময়। সময় হলো মানবজীবনের পুঁজি, মানুষকে তার ইহ ও পর কালের মুনাফা অর্জন করতে হবে এ সময় বিনিয়োগ করেই। অর্জন করতে হবে নেক আমল, গোছাতে হবে পরকাল। তাই সময়ের অপচয় মানে জীবনের অপচয়, ইহ ও পর কালের ব্যর্থতা। সময়ের মূল্য ও গুরুত্ব বোঝানোর জন্য মহান প্রভু সময়ের শপথ করেছেন। ইরশাদ করেন, ‘শপথ সময়ের! মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু তারা নয় যারা ইমান আনে, সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়।’ (সুরা আল আসর, আয়াত ১-৩)
সময় একবার অতিক্রান্ত হলে তা আর ফিরে পাওয়া যায় না। এজন্যই সময়ের মূল্য যে-কোনো কিছু অপেক্ষা অনেক বেশি। সৃষ্টির শুরু থেকেই পৃথিবীতে নানা পরিবর্তন ঘটছে। আবিষ্কৃত হয়েছে অনেক অজানা বিষয়। কিন্তু সময়কে ধরে রাখার কোনো যন্ত্র বা পদ্ধতি মানুষ আবিষ্কার করতে পারেনি। নদীর স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। অপেক্ষা করে না সময় কারও জন্য। তাহলে সময় কি স্বার্থপর? না, সে পরম যোদ্ধা, কর্মবীর, কর্তব্যপরায়ণ ও গতিশীল। সে নির্লোভ, তাই কোনো লোভ তাকে স্পর্শ করতে পারে না। সে নির্ভীক যোদ্ধা, তাই কোনো বাধা তাকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে না। সে ক্লান্তিহীন, তাই অবিরাম পরিশ্রম করে চলেছে একটা সুন্দর প্রভাত আর বিশ্রামের রাত উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে। সময় চলমান, সে কখনো থামতে জানে না, ক্লান্ত হয় না। বিশ্রাম নেয় না। সদা চলমান সে তার আপন গতিতে। আমাদের প্রয়োজন প্রতিটি মিনিট ও সেকেন্ডের যত্ন নেওয়া। ঘণ্টাগুলো নিজেই যত্ন নিয়ে নেবে। প্রত্যেকের জীবনের কিছু স্বপ্ন থাকে। আর এর জন্য প্রয়োজন সময় এবং প্রচেষ্টা।
আমাদের উচিত, সময়ের অপচয় এবং অপব্যবহারের আগেই সময়ের মূল্য বোঝা। সময় অতিক্রম হলো মানে জীবনের একটি অংশ হারিয়ে গেল। আপনি হয়তো সময়ের মালিক না, কিন্তু এ সময়টা আপনি বিনামূল্যেই ব্যবহার করতে পারেন। সে সুযোগে আপনি গড়ে তুলতে পারেন ইহ ও পর কালে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের নীড়। জনৈক ব্যক্তি রসুল (স.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, কে উত্তম মানুষ? তিনি বললেন, ‘যে দীর্ঘায়ু লাভ করে এবং তার কর্ম ভালো হয়।’ পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন, কে নিকৃষ্ট মানুষ? উত্তরে রসুল (স.) বলেন, ‘যে দীর্ঘায়ু লাভ করে এবং তার কর্ম নিকৃষ্ট হয়।’ (তিরমিজি) অন্য হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘বিজ্ঞ তো সে-ই, যে আপন দায়িত্বে অভিহিত আছে, আর মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য কাজ করে। অক্ষম তো সে-ই যে স্বীয় প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং আল্লাহর কাছে অবাস্তব আশা পোষণ করে।’ (তিরমিজি)
পিএসএন/এমআই