সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা রমজানের গুরুত্বপূর্ণ একটি আর্থিক ইবাদত। এটি জাকাতেরই একটি প্রকার। সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। এর দুটি তাৎপর্য বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। ১. অশালীন কথা ও কাজে রোজার যে ক্ষতি হলো তা পূরণের জন্য। ২. নিঃস্ব লোকের আহার জোগানোর জন্য। (আবু দাউদ: ১৬০৯)
সদকাতুল ফিতর ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে আদায় করা উত্তম। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) লোকজনকে ঈদের নামাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বে সদকাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (সহিহ বুখারি: ১৫০৯)
অবশ্য জাকাতের মতো রমজান মাসেও তা আদায় করা যায়। কোনো কোনো সাহাবি থেকে ঈদের কয়েকদিন আগেই ফিতরা আদায়ের কথা প্রমাণিত আছে। যেমন নাফে (রহ) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) ঈদের দুয়েকদিন পূর্বেই তা (ফিতরা) আদায় করে দিতেন। (সুনানে আবু দাউদ: ১৬০৬)
কারো কাছে সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত সম্পদ ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় বিদ্যমান থাকলে তার ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। যার ওপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব, তিনি নিজের পক্ষ থেকে যেমন আদায় করবেন, তেমনি নিজের অধীনদের পক্ষ থেকেও আদায় করবেন। তবে ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার জন্য নিসাব পরিমাণ সম্পদের ওপর জাকাতের মতো বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়। (ফাতহুল কাদির: ২/২৮১)
ইসলামি শরিয়তমতে, আটা, যব, কিশমিশ, খেজুর ও পনির ইত্যাদি পণ্যগুলোর যেকোনো একটি দিয়ে ফিতরা প্রদান করা যায়। সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ সম্পর্কে হাদিস শরিফে দুটি মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়েছে। ১. ‘এক সা’ ২.‘অর্ধ সা’। খেজুর, পনির, জব ও কিশমিশ দ্বারা আদায়ের ক্ষেত্রে এক ‘সা’ (তিন কেজি ২৭০ গ্রামের কিছু বেশি)। আর গম দ্বারা আদায় করতে চাইলে ‘নিসফে সা’ (এক কেজি ৬৩৫ গ্রামের কিছু বেশি) (আওজানে শরইয়্যাহ, পৃষ্ঠ- ১৮)
আমাদের দেশের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ রাষ্ট্রীয় সংস্থা ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ‘এক সা’-এর পরিমাণ নির্ধারণ করেছে তিন কেজি ৩০০ গ্রাম। আর ‘আধা সা’-এর পরিমাণ এক কেজি ৬৫০ গ্রাম। এ বছর (২০২৫ সালে) ইসলামিক ফাউন্ডেশন নির্ধারিত সর্বনিম্ন ফিতরার পরিমাণ (গম ও আটার হিসাবে সদকা) ১১০ টাকা। সর্বোচ্চ ফিতরার পরিমাণ (পনিরের হিসাবে সদকা) ২৮০৫ টাকা। এছাড়া যবের ফিতরা ৫৩০ টাকা, কিশমিশ ১৯৮০ টাকা ও খেজুরের ফিতরা ২৩১০ টাকা নির্ধারিত হয়েছে।
সামর্থ্য থাকার পরও সর্বনিম্ন দ্রব্যের ফিতরা দেওয়া অপছন্দনীয়। হাদিস শরিফে এসেছে একবার রাসুলুল্লাহ (স.)-কে সর্বোত্তম দান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ইরশাদ করেন, ‘দাতার নিকট যা সর্বোত্কৃষ্ট এবং যার মূল্যমান সবচেয়ে বেশি।’ (বুখারি: ২৫১৮)