সংঘর্ষে জড়ায় বিএনপির দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা। করে পাল্টাপাল্টি মামলা। তবে আসামির তালিকায় আছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর নাম। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। বিএনপির নেতাকর্মীর মধ্যেও দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাতে চরফ্যাসনের দক্ষিণ আইচা থানার আইচা সদর বাজারে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিএনপির দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার ৭৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়নের অনুসারী কেন্দ্রীয় যুবদলের সদস্য সিরাজুল ইসলাম সবুজ খান। একই ঘটনায় শুক্রবার রাতে ৬৬ জনের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেন সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলমের অনুসারী বিএনপি নেতা আনোয়ারুল ইসলাম ছুট্টু। বিষয়টি শনিবার দুপুরে নিশ্চিত করেন দক্ষিণ আইচা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এরশাদুল হক ভূঁইয়া।
আলমের অনুসারীর মামলার বিবরণে জানা যায়, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী তাদের প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলে নয়নের অনুসারীরা হামলা চালান। এতে আহত হন অন্তত ১৮ জন। এ ঘটনায় নয়নের অনুসারী দক্ষিণ আইচা থানা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম খন্দকারসহ ৬৬ জনকে আসামি করে মামলা করেন বিএনপি নেতা আনোয়ারুল ইসলাম ছুট্টু। এ মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৭ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন- চরমানিকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইসমাইল ফকির, চরমানিকা পশ্চিম শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিপন ফকির, ছাত্রলীগের সহসাংগঠনিক ইলিয়াছ, চরমানিকা ইউনিয়য়নের পশ্চিম শাখার সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন, চরমানিকা পূর্ব শাখার শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক মো. শাজাহান, চরমানিকা ইউনিয়নে ছাত্রলীগের পশ্চিম শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালম, দক্ষিণ আইচা থানা যুবলীগের সদস্য মহসিন শাল, চরমানিকা ইউনিয়নের শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউসুব ফকির, থানা ছাত্রলীগের সহসাংগঠনিক তৈয়বুর রহমনা তুহিন, থানা শ্রমিক লীগের সদস্য মো. শাহাজান, চরমানিকা যুবলীগের সাংগঠনিক মনির হোসেন, চরমানিকা ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জসিম, দক্ষিণ আইচা থানা যুবলীগের সদস্য প্রভাষক মো. ফিরোজ, দক্ষিণ আইচা থানা মৎস্যজীবী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. কামাল, যুবলীগের সদস্য সোহেল মাতাব্বর, দক্ষিণ আইচা থানা যুবলীগের সদস্য প্রভাষক ফরাদ হোসেন, হোসেন, দক্ষিণ আইচা থানা যুবলীগের সদস্য ইউপি সদস্য ফারুক ফরাজী।
যুবদল নেতা সিরাজুল ইসলাম সবুজ খানের মামলার বিবরণে জানা য়ায়, গত মঙ্গলবার রাতে আলমের অনুসারীরা প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশে হামলা চালান। এতে আহত হন অন্তত ২৮ জন। এ ঘটনায় ৭৩ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে দু’জন আওয়ামী লীগ নেতা রয়েছেন। তারা হলেন- দক্ষিণ আইচা থানা যুবলীগের সদস্য নীলিমা জ্যাকব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিন আরিফ, থানা যুবলীগের সদস্য মো. সারোয়ার।
বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের মামলায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আসামি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দক্ষিণ আইচা থানার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহাগ আখন। তার ভাষ্য, বিএনপি নেতাকর্মীর রোষানলে পড়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী এলাকায় নেই। বাড়িছাড়া হয়েছেন অনেকে। কেউবা প্রবাসে চলে গেছেন। মারামারি করল বিএনপিরই দুই পক্ষের লোকজন। অথচ আসামি করা হলো আওয়ামী লীগের ১৯ নেতাকর্মীকে।
মামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি নয়নের অনুসারী দক্ষিণ আইচা থানা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম খন্দকার। তবে নয়নের পক্ষে মামলার বাদী কেন্দ্রীয় যুবদলের সদস্য সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনায় জড়িতদের আসামি করে আমাদের মামলাটি করা হয়েছে। যে দু’জনকে আওয়ামী লীগ নেতা দাবি করা হচ্ছে মূলত তারা বিএনপি কর্মী।’
বিষয়টি নিয়ে আলমের অনুসারী দক্ষিণ আইচা থানার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফারুক মাস্টার বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এসব নেতাকর্মীর মধ্যে আমার জানামতে তিনজন সংঘর্ষের সময় ছিলেন না। তবে অপর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছিলেন বলে মামলার বাদী জানিয়ে এজাহার দাখিল করেছেন।’
দক্ষিণ আইচা থানার ওসি এরশাদুল হক ভূঁইয়া জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় বাদীদের দেওয়া এজাহার মতে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি মামলা নেওয়া হয়েছে। তবে মামলা দুটি তদন্তাধীন। সংঘর্ষে যারা জড়িত নয়, যাচাই করে মামলা থেকে তাদের বাদ দেওয়া হবে।