দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গণনায় নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে ২৭টি প্রতিষ্ঠান। এরপরও গত সপ্তাহে ডিএসইএক্স সূচক ও গতি কমেছে। একইসঙ্গে কমেছে লেনদেনও।
ডিএসই’র তথ্য বলছে, ২০২২ সালের প্রথম তিন সপ্তাহ ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর গত সপ্তাহে দেশের শেয়ার বাজারে কিছুটা দরপতন হয়েছে। এতে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা কমেছে। যদিও আগের তিন সপ্তাহের টানা উত্থানে ডিএসই’র বাজার মূলধন বেড়েছিল ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি।
ডিএসই’র মূলধন এখন ৫ লাখ ৬২ হাজার ৯০২ কোটি টাকা
গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬২ হাজার ৯০২ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ৬৫ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসই’র মূলধন কমেছে ২ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। অবশ্য আগের তিন সপ্তাহে মূলধন বেড়েছিল ২৩ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। মূলত বাজার মূলধন কমে যাওয়ায় অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ কমেছে।
২৬৮টির প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমেছে
বাজার মূলধন কমে যাওয়ার পাশাপাশি গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসই’তে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৯৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়লেও দাম কমেছে ২৬৮টির। তবে ২১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
মূল্যসূচক কমেছে ৭৮ দশমিক ১৪ পয়েন্ট
এদিকে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে যাওয়ায় গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক ডিএসই-এক্স কমেছে ৭৮ দশমিক ১৪ পয়েন্ট। এর আগে বছরের প্রথম তিন সপ্তাহে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছিল ৩৪৯ দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্ট।
প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি টানা তিন সপ্তাহ বৃদ্ধির পর গত সপ্তাহে কমেছে ইসলামি শরিয়ার ভিত্তিতে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচকও। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে ৮ দশমিক ৪২ পয়েন্ট। আগের তিন সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছিল ৭৭ দশমিক ২৮ পয়েন্ট। এছাড়া বাছাই করা ভালো প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকও বছরের প্রথম তিন সপ্তাহ টানা বৃদ্ধির পর গত সপ্তাহে কমেছে। গত সপ্তাহে এই সূচক কমেছে ৩৩ দশমিক শূন্য ৪ পয়েন্ট। আগের তিন সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছিল ১০২ দশমিক ৮০ পয়েন্ট।
ডিএসই’র তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২২৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৬৪৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৪১৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
লেনদেন হয়েছে ৬ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা
সপ্তাহজুড়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মোট লেনদেন হয়েছে ৬ হাজার ১৪৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ৮ হাজার ২৪৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। সেই হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ২ হাজার ৯৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
লেনদেনে এগিয়ে বেক্সিমকো
গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ারের। সপ্তাহজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৮৫ কোটি ৫৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৪৭ কোটি ১৯ লাখ ২৭ হাজার টাকার। ১৭১ কোটি ৬ লাখ ৫ হাজার টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে পাওয়ার গ্রিড।
দাম বৃদ্ধির শীর্ষে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স
গত সপ্তাহজুড়ে দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স। গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের কাছে পছন্দের শীর্ষে ছিল সাধারণ বিমা খাতের প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার। ফলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে দাম বৃদ্ধিতে শীর্ষস্থান দখল করেছে এটি। এমনকি সপ্তাহের প্রতিটি কার্যদিবসেই দাম বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স।
গত সপ্তাহজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৬০ শতাংশ, যা টাকার অঙ্কে বেড়েছে ৯ টাকা ৬০ পয়সা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের পর ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ২৫ টাকা ৬০ পয়সা, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ১৬ টাকা।
দাম কমার শীর্ষে তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল মিলস
গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ হারানোর শীর্ষস্থান দখল করেছে তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড। বিনিয়োগকারীরা প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার কিনতে আগ্রহী না হওয়ায় সপ্তাহজুড়েই এর দাম কমেছে। এতে গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে দাম কমে যাওয়ার শীর্ষস্থান দখল করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
সপ্তাহজুড়ে তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের শেয়ারের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তাদের প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ২৫ টাকা ২০ পয়সা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের পর প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ১৬২ টাকা ৭০ পয়সা, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের পর ছিল ১৮৭ টাকা ৯০ পয়সা।
পিএসএন/এমঅাই