ভারতের কাছ থেকে দেশটিতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়ে কিছু জানতে চাওয়ার কোনো নির্দেশনা সরকারের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দেওয়া হয়নি। শেখ হাসিনাকে ফেরানোর বিষয়টি রাজনৈতিক, কাজেই সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হলে কাজ করবে মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সাপ্তাহিক সংবাদ ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও মুখপাত্র মো. তৌফিক হাসান এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনাকে ফেরত আনা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, সরকারে সংশ্লিষ্ট পক্ষ থেকে এখনও কোনো নির্দেশনা পাইনি। এটি যেহেতু পররাষ্ট্র সম্পর্কিত বিষয়, উনি (শেখ হাসিনা) যেহেতু বিদেশে রয়েছেন, ফলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগই শ্রেয়। আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি। পাওয়া মাত্রই আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
শেখ হাসিনা কি দেশের বাইরে চলে গেছেন, নাকি পলাতক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি কীভাবে দেখছে, উত্তরে তিনি বলেন, উনার (শেখ হাসিনার) বর্তমান অবস্থাটা কী আপনারা সবাই যানেন। উনি দেশের বাইরে রয়েছে এবং পলাতক দুটিই সত্যি। কোনোটাই মিথ্যা বলা যাবে না।
শেখ হাসিনাকে ফেরানোর যথাযথ ব্যবস্থাটা কী, জবাবে তৌফিক হাসান বলেন, যথাযথ ব্যবস্থাটা হচ্ছে অনুষ্ঠানিকভাবে আমরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে জানাবো। বিষয়টি রাজনৈতিক, কাজেই সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হলে, আমরা কাজ করব। আর সামনে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সেখানেও এ বিষয়ে আলোচনার অবকাশ থাকবে। তখন পরিষ্কার হবে, বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কীভাবে দেখছে।
ভারতে শেখ হাসিনা কী স্ট্যাটাসে অবস্থান করছেন, এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে কোনো তথ্য রয়েছে কি না, উত্তরে তৌফিক হাসান বলেন, পত্রিকার মাধ্যমে যেটুকু জেনেছি, সেটুকুই জানি। কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কেউ জানায়নি। আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে জানতে চায়নি। কারণ জানতে চাওয়ার কোনো নির্দেশনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করতে বিভিন্ন দেশ থেকে সরকারের ওপর চাপ রয়েছে বলে এক উপদেষ্টা জানিয়েছেন, এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে কী তথ্য রয়েছে, জবাবে তিনি বলেন, কোনো দেশ থেকে এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কিছু জানানো হয়নি।
তৌফিক হাসান বলেন, আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ-সংক্রান্ত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। ডিসেম্বর মাসে এফওসি হবে এটুকু জানা গেছে। কিন্তু চূড়ান্ত তারিখ কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। আমরা মনে করছি, এই এফওসিটা হওয়ার মাধ্যমে আমাদের দুই দেশের সম্পর্কে গতি পাবে।
শেখ হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে প্রত্যর্পণ চুক্তির প্রশ্নে তৌফিক হাসান বলেন, সেটা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। মাত্র একটা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। এখনও অনেক সময় রয়েছে।
এফওসিতে আলোচনার বিষয়ে মুখপাত্র বলেন, কী বিষয়ে আলোচনা হবে এটা দুই দেশ মিলে ঠিক করবে। সাধারণত যেটা হয় সব বিষয় নিয়ে এখানে আলোচনা হয়। এই মুহূর্তে ঠিক বলা যাচ্ছে না যে ঠিক কোন বিষয়ে আলোচনা হবে। আশা করি, আলোচনায় সব বিষয় স্থান পাবে। ভিসা নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে সেটা নিয়ে আমরা আলোচনা করার সুযোগ পাব। যেন অচিরেই এই ভিসা সমস্যার সমাধানে তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ঢাকায় বৈঠক করার বিষয়ে উভয়পক্ষের সম্মতিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তৌফিক হাসান।
ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচারে সরকারের উদ্যোগ নিয়ে মুখপাত্র বলেন, ভারতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে যে অপপ্রচার চলছে সেটি আমরা বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনকে বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছি। তাদের বলেছি, আমাদের দুই দেশের পারস্পরিক যে সম্পর্ক রয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচার মোটেই কাম্য নয়।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি ও সমঝোতা পুনর্বিবেচনার বিষয়টি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার বলেও জানান মুখপাত্র। তিনি বলেন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যেসব চুক্তি ও সমঝোতা সই হয়েছে সেগুলো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত। সে কারণে সবার সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। যেটা একটু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। গত ১০০ দিনে হয় তো এ ব্যাপারে অগ্রগতি সীমিত। কিন্তু আশা করছি, আগামী দিনগুলোতে এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হওয়ার অবকাশ রয়েছে।
আগামী ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ ও বেলজিয়ামের মধ্যে দ্বিতীয় রাজনৈতিক সংলাপ জানিয়ে মুখপাত্র বলেন, বৈঠকটি অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। সংলাপে দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। পাশাপাশি ইইউ-বাংলাদেশ সম্পর্ক এবং বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয়ে মত বিনিময় হবে। সংলাপে অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ড. মো. নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের এবং বেলজিয়ামের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিষয়ক মহাপরিচালক জিরোইন কোরম্যান দেশটির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম আহমেদ খান আগামী ২৫-২৮ নভেম্বর বাংলাদেশ সফর করবেন। এই সফরকালে তিনি প্রধান উপদেষ্টা এবং পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলির প্রস্তাবিত সাক্ষী সুরক্ষা প্রটোকল চূড়ান্তকরণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। এ বিষয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মতামত গ্রহণ করা হয়েছে।
তৌফিক হাসান জানান, বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রিয়ার অনাবাসী রাষ্ট্রদূত গত ১৫–১৮ নভেম্বর ঢাকা সফরকালে দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা পাওয়া নিয়ে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে সব রকমের সম্ভাব্য সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।