কানাডা, মেক্সিকো এবং চীনের পণ্যের উপর শুল্ক চাপিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তিন দেশেরই যুক্তরাষ্ট্রে বড় বাণিজ্যিক বাজার আছে।
দেশগুলোর ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের চাপানো শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তে পারে। ফলে অর্নৈতিক দিক থেকে মার্কিনিরা দুর্ভোগে পড়তে পারে বলে ট্রাম্প সতর্ক করেছেন।
নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্লাটফর্ম ট্রুথ স্যোশালে রোববার ট্রাম্প লেখেন, “কিছু কষ্ট কী হবে? হ্যাঁ হতে পারে (আবার নাও হতে পারে)।”
তবে আজকের এই ত্যাগ ভবিষ্যতে কাঙ্খিত ফল বয়ে আনবে এবং ‘আমেরিকা আবার মহান’ হবে বলে ট্রাম্প মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, কানাডা, মেক্সিকো এবং চীনের মতো কিছু দেশ বাণিজ্য, অপরাধ এবং মাদক পাচারের দিক দিয়ে দশকের পর দশক ধরে আমেরিকাকে খুবলে খাচ্ছে। সেইসব দিন এখন শেষ হয়েছে।
কানাডা এবং মেক্সিকোর পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প। আগামী মঙ্গলবার থেকে এই শুল্ক কার্যকর হবে। ট্রাম্প বলে আসছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত পেরিয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অভিবাসী আসার প্রতিক্রিয়ায় এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি মোকাবেলায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ওদিকে, হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, কানাডা ও মেক্সিকো ‘অবৈধ ফেন্টানিল’ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ওই মাদকের কারণে কোটির বেশি আমেরিকানের মৃত্যু হয়েছে।
আর বাণিজ্যের বিষয়ে ট্রাম্পের বক্তব্য হচ্ছে, পণ্য যুক্তরাষ্ট্রেই উৎপাদন হওয়া উচিত। তাছাড়া, অন্য দেশকে ভর্তুকি দিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার হারানোও উচিত না। এই ধারা বদলাতে গেলে জনগণের কিছু কষ্ট হবে, তবে তা আখেরে ভাল ফলই বয়ে আনবে বলেই মনে করেন ট্রাম্প।
কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের ওপর ট্রাম্পের শুল্কের চাবুকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পণ্য উল্টো ফল ভুগতে পারে। ট্রাম্প যে হারে শুল্ক আরোপ করেছেন, তার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে মার্কিন পণ্যেও একই হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে কানাডা এবং মেক্সিকো।
এতে ফল, সবজি, মাংস, গ্যাস, গাড়ি, বৈদ্যুতিক সামগ্রী, খেলনা, জামাকাপড়, কাঠ এবং বিয়ারের দাম বাড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটি সবচেয়ে বেশি ফল এবং সবজি আমদানি করে মেক্সিকো থেকে। বিভিন্ন শস্য, গবাদি পশু, মাংস এবং খামার সংক্রান্ত অন্য পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি যায় কানাডা থেকে।
দুই দেশ থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের উপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপানো শুল্কের কারণে এসব পণ্যের দাম যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে পেতে পারে। প্রভাব পড়তে পারে তেল এবং গ্যাসের দামেও। গত বছরে কানাডা থেকে ৯৭০০ কোটি ডলারের তেল এবং গ্যাস আমদানি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গাড়ি এবং গাড়ির যন্ত্রাংশের বাজারে একটি বড় অংশ আমদানি হয় মেক্সিকো থেকে। কম খরচে শ্রমিক পাওয়ার কারণে বিভিন্ন গাড়ি সংস্থা তাদের কারখানা মেক্সিকোয় স্থানান্তর করেছে।
গত বছর ডিসেম্বর বাদে মেক্সিকো থেকে ৮ হাজার কোটির বেশি ডলারের গাড়ি এবং আরও ৬ হাজার কোটির বেশি ডলারের গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেক্ষেত্রে গাড়ির দামের উপরও প্রভাব পড়তে পারে।
কানাডা এবং মেক্সিকো দুই দেশ থেকেই স্টিলের পণ্য রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। পাশাপাশি মেক্সিকো থেকে প্রচুর পরিমাণ বিয়ার এবং অন্য মদও আমদানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে এ সব পণ্যেরও দাম বাড়তে পারে।
ট্রাম্প চীনের পণ্যের ওপর যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন তার পাল্টা জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে চীনও। উপরন্তু তারা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় মামলা করার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছে।
চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করলে খেলনা, জুতোসহ বিভিন্ন জিনিসের দাম বেড়ে যেতে পারে। খেলনার আন্তর্জাতিক বাজারের বেশিরভাগই চীনের দখলে আছে। চীন থেকে প্রায় ৭৫ শতাংশ খেলনা এবং অন্য ক্রীড়াপণ্য আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র।
চীনে তৈরি জুতো এবং বৈদ্যুতিক পণ্যও প্রচুর আছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। তাছাড়া, চীনে তৈরি মোবাইল, টিভি, ল্যাপটপ, ভিডিও গেমও আছে প্রচুর। ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রভাব পড়তে পারে এই সব পণ্যে।