শাভি এর্নান্দেসের কোচিংয়ে গত মৌসুম বার্সেলোনার কেটেছিল ভীষণ বিবর্ণ। তবে তার জায়গায় দায়িত্ব পাওয়া হান্সি ফ্লিকের হাত ধরে এই মৌসুমে দারুণ ছন্দে আছে কাতালান দলটি। ঘরোয়া ও ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় ধারাবাহিকভাবে দাপুটে পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে চলেছে তারা। আগের ও বর্তমান কোচের মধ্যে তুলনাও হচ্ছে মাঝেমধ্যে। যা মোটেও পছন্দ নয় ফ্লিকের।
দলের ব্যর্থতার দায় নিয়ে গত মৌসুমের মাঝপথেই শাভি ঘোষণা দেন, মৌসুম শেষে ক্লাব ছাড়বেন তিনি। মাঠের বাইরের নানা চাপে তিনি কোচের পদ ছেড়ে যাচ্ছেন, এটাও বলেন একাধিকবার। যদিও পরে তাকে থেকে যাওয়ার জন্য রাজি করায় ক্লাব কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নাটকীয় পরিবর্তনে শেষ পর্যন্ত বরখাস্ত করা হয় ক্লাবের সাবেক মিডফিল্ডারকে।
শাভির স্থলাভিষিক্ত করা হয় ফ্লিককে। জার্মানি ও বায়ার্ন মিউনিখের সাবেক কোচের কোচিংয়ে বার্সেলোনা কেমন করবে, ক্লাবের সংস্কৃতির সঙ্গে তিনি মানিতে নিতে পারবেন কি না, এসব নিয়ে প্রশ্ন আর কৌতূহল ছিল অনেক। তবে সবকিছুতে এখন পর্যন্ত দারুণ সফল তিনি। তার হাত ধরে বলা যায় নতুন যুগের সূচনা করেছে বার্সেলোনা।
সম্প্রতি বার্সেলোনার সাবেক ফরোয়ার্ড থিয়েরি অঁরি বলেন, শাভিই ক্লাবের নতুন যুগের শুরু করেছিলেন, ফ্লিক নয়। বার্সেলোনার পুনরুত্থানের জন্য শাভির কৃতিত্ব প্রাপ্য বলেও মন্তব্য করেন ফরাসি গ্রেট। এ প্রসঙ্গেই শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে ফ্লিককে প্রশ্ন করা হয়, অঁরির বক্তব্য নিয়ে তার ভাবনা কী।
ফ্লিক বলেন, শাভি ও তার পরিস্থিতি ভিন্ন। দলে তরুণদের সুযোগ দেওয়ায় শাভির প্রশংসাও করেন তিনি।“আমার মনে হয় না, সবসময় শাভির সঙ্গে আমার কাজের তুলনা করা ন্যায়সঙ্গত। এখানে দুটি পরিস্থিতিই ভিন্ন এবং তার প্রতি আমার অনেক শ্রদ্ধা রয়েছে। তিনি দারুণ একজন খেলোয়াড় ছিলেন এবং দারুণ কোচ। কিন্তু এখন আমি এখানে আছি।”“অবশ্যই তিনি একাডেমির খেলোয়াড়দের খেলার সুযোগ দিয়েছিলেন এবং এটি তার মেধাও। বলতে পারি, আমি একই পথ অনুসরণ করছি।”
লা লিগায় ১২ ম্যাচে ১১ জয়ে ৩৩ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে বার্সেলোনা। শিরোপাধারী রেয়াল মাদ্রিদের চেয়ে তারা এগিয়ে আছে ৬ পয়েন্টে। এই ১২ ম্যাচে লামিনে ইয়ামাল, রবের্ত লেভানদোভস্কিরা গোল করেছেন ৪০টি। মৌসুমে প্রথম ক্লাসিকোয় রেয়ালকে তাদের মাঠেই ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে তারা।চ্যাম্পিয়ন্স লিগে হারে শুরুর পর টানা তিন ম্যাচ জিতেছে তারা প্রতিটিতে চার বা এর বেশি গোল করে। ইউরোপ সেরার প্রতিযোগিতায় চার ম্যাচে তাদের গোল ১৫টি। এর মধ্যে বায়ার্নকে তারা উড়িয়ে দিয়েছে ৪-১ গোলে। সবশেষ ম্যাচে রেড স্টার বেলগ্রেডের মাঠে জিতেছে ৫-২ গোলে।
দলের কোন বিষয়গুলো নিয়ে বেশি খুশি ফ্লিক?- এমন প্রশ্নের উত্তরে দলগত পারফরম্যান্সের কথা বললেন তিনি।“অনেক কিছু আছে, যেগুলো নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। আমরা যখন ম্যাচগুলো দেখি, যেমন বেলগ্রেডের ম্যাচটি, খেলোয়াড়দের কাছে আমরা যা চেয়েছি, সেটাই দেখতে পেয়েছি, আর তা হলো দলগতভাবে খেলা।”“এস্পানিওলের বিপক্ষে আমরা দল হিসেবে শেষ করতে পারিনি, বেলগ্রেডে তা আমরা করেছি। আর আমার কাছে এটির মূল্য অনেক। আমরা দল হিসেবে কাজ করি, যাতে ছেলেরা দল হিসেবে খেলতে এবং রক্ষণ সামলাতে পারে। রক্ষণের ক্ষেত্রে কাজটা এত সহজ নয় এবং তারা সেটাও খুব ভালো করছে।”
ফ্লিকের কোচিংয়ের উল্লেখযোগ্য একটি দিক, দলকে ‘হাই-লাইন’ ডিফেন্সের কৌশলে খেলান তিনি। এতে এখন পর্যন্ত বেশ সফল তিনি। ডিফেন্ডাররা তাদের কাজটা করছেন দারুণভাবে। তাদের বিপক্ষে বারবার অফসাইডের ফাঁদে পড়তে দেখা যাচ্ছে প্রতিপক্ষকে।লিগে রেয়াল মাদ্রিদের চেয়ে ফের ৯ পয়েন্টে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে রোববার রেয়াল সোসিয়েদাদের মুখোমুখি হবে ফ্লিকের দল।