চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ দলের তিন ফরম্যাটের অধিনায়কের দায়িত্ব পাকাপাকিভাবে বুঝে নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। শুরুতে সবদিক সামাল দিয়ে সব চলছিলো ভালোই। এরপর কি যেন হলো শান্তর। ব্যাটে চলছে রানখরা। সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টেও ব্যাট (৭ ও ২৩ রান) হাতে নিদারুণ ব্যর্থ টাইগার অধিনায়ক। তারচেয়েও বড় যে জিনিস চোখে পড়েছে, সেটি শান্তর ব্যক্তিত্বের সাথে বড়ই বেমানান। সেই উৎফুল্ল শান্তকে আর দেখা যাচ্ছে না মাঠে। শান্ত কি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন? সমালোচনায় জর্জরিত বাংলাদেশ অধিনায়ক এবার নেতৃত্ব থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তই নিয়ে ফেলেছেন। এমনটাই জানাচ্ছে ক্রিকবাজ। যদিও শোনা যাচ্ছে বিসিবি শান্তকে চালিয়ে যেতে অনুরোধ করবে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের শেষ টেস্টের পর বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব ছাড়তে চান নাজমুল হোসেন শান্ত। নিজের পারফরম্যান্সে জোর মনোযোগ দিতেই এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এরইমধ্যে চিঠিও দিয়েছেন বিসিবিতে। ক্রিকেট বোর্ডের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে ক্রিকেটভিত্তিক ভারতীয় ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ। তাই সব গুঞ্জন সত্যি হলে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ২৯ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টই হবে শান্তর নেতৃত্বের শেষ ম্যাচ ।
শান্তর প্রতিভা নিয়ে সবসময়ই উচ্ছ্বসিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাথে জড়িত সকলেই কিন্তু এখনো পর্যন্ত শান্ত তার প্রতিদান দিতে পারেছেন যৎসামান্যই। বিসিবি সভাপতি দেশে আসলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিসিবি। এ প্রসঙ্গে বিসিবির এক কর্মকর্তা ক্রিকবাজকে বলেছেন, ‘সে আমাদের জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ শেষে সে আর দলকে নেতৃত্ব দিতে চায় না।’ তবে শান্ত এখনো অপেক্ষায় বোর্ডের সিদ্ধান্তের। তিনি বলেন, ‘দেখা যাক কী হয়। কারণ আমি এখনও সভাপতির কাছ থেকে শোনার অপেক্ষায় আছি।’
তবে শেষ পর্যন্ত শান্ত সরে দাঁড়ালে কে হবেন নতুন অধিনায়ক তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে ক্রিকেটমহলে। আসলে বাংলাদেশ দলে নিয়মিত পারফর্মারের এতই অভাব যে কাউকে নিশ্চিতভাবে বিবেচনায় আনা মুশকিলই বটে। এবার ধারণা করা হচ্ছে বিসিবি আর একক অধিনায়কের পথে না হেঁটে ভিন্ন ফর্মেটে ভিন্ন অধিনায়কের দ্বারস্থ হতে পারে। সেক্ষেত্রে কারা আছেন মন্দের ভালো দেখে নেওয়া যাক–
মেহেদী হাসান মিরাজ
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ দলে যে অল্প ক’জন নিয়মিত পারর্ফম করছেন মিরাজ তাদের অন্যতম। ব্যাটে বলে ‘সাকিব’ হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছেন অনেকদিন ধরেই। মেহেদী হাসান মিরাজই এই মূহুর্তে সবচেয়ে আদর্শ বিবেচনা হতে পারে। মিরাজ অবশ্য নেতৃত্বে নতুন না। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে নেতৃত্ব দিয়েছেন দীর্ঘদিন। ২০১৬ সালে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে তুলেছিলেন সেমিফাইনালে। সেবার ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সস্বরূপ হয়েছিলেন টুর্নামেন্ট সেরা। ব্যাট হাতে ২৪২ রানের সঙ্গে ১২ উইকেট শিকার করেছিলেন মিরাজ। জাতীয় দলের হয়েও স্মরণীয় সব সাফল্য আছে মিরাজের ঝুলিতে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে ইংল্যান্ডের সাথে অভিষেক হয় মিরাজের। সেই সিরিজ বিখ্যাত হয়ে আছে প্রথমবার ইংলিশ বধের জন্য। অভিষেক সিরিজে ১৯ উইকেট নিয়ে ক্রিকেটের কুলিন সংস্কারে এসেই জাত চেনান মিরাজ। বিসিবি যদি তিন ফর্মেটে ভিন্ন অধিনায়কের দ্বারস্থ হয় তবে ওয়ানডে আর টেস্টের জন্য বাংলাদেশ দলের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক হিসেবে মিরাজকে ভাবতেই পারে বোর্ড।
তাসকিন আহমেদ
জাতীয় দলে খেলার বয়স ১০ বছর পার হয়েছে তাসকিনের। যথেষ্ঠ অভিজ্ঞও বলা চলে। তিন ফর্মেটেই পেস বোলিংয়ে বাংলাদেশ দলের অন্যতম বড় ভরসার নাম তাসকিন। করোনা পরবর্তী সময়ে যেভাবে নিজেকে বদলেছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। তাসকিনকে ভাবা যেতে পারে টি-টুয়েন্টির নতুন অধিনায়ক হিসেবে। মাশরাফির পর পেস বোলার কেউ বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়নি। তাসকিনকে বিসিবি দায়িত্ব দিলে তা হবে নিঃসন্দেহে সাহসী এবং একইসাথে দারুন চমকপ্রদ। তাসকিন আপনি প্রস্তুত তো?
তাওহিদ হৃদয়
খুব বেশিদিন হয়নি তাওহিদ হৃদয়ের অভিষেক হয়েছে বাংলাদেশ দলে। দ্রতই নিজের প্রতিবার সাক্ষর রাখা শুরু করেছেন হৃদয়। বাংলাদেশ দলে বর্তমান সময়ে ওয়ানডে এবং টি-টুয়েন্টিতে ব্যাটিংয়ে অন্যতম ভরসার নাম তিনি। যুব বিশ্বকাপজয়ী হৃদয় এরইমধ্যে আলাদা ব্যাটিংয়ের ধরনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বাংলাদেশ দলে। আক্রমণাত্বক মানসিকতার হৃদয়ও ভালো অপশন হতে পারে টি-টুয়েন্টি ও ওয়ানডের নতুন অধিনায়ক হিসেবে। বত্রিশ টি-টুয়েন্টি আর ত্রিশ ওডিয়াই খেলে ১০ ফিফটিতে ১৫০০ রান করেছেন হৃদয়। সর্বশেষ বিপিএলে কুমিল্লার হয়ে সেঞ্চুরিও হাকিয়েছেন হৃদয়।