আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সংবাদপত্রের ভূমিকা অসামান্য। শুধুমাত্র খবর জানার জন্য সীমাবদ্ধ থাকেনি এর ব্যবহার, সংবাদপত্র কালে কালে হয়ে উঠেছে মেধা বিকাশের সিঁড়ি, বিনোদনের অন্যতম হাতিয়ার এবংকি একটা জাতির অধিকার আদায়ের মুখপাত্র হিসেবেও সংবাদপত্রের ভূমিকা শীর্ষেই।
সংবাদপত্র বা খবরের কাগজ হল একটি লিখিত প্রকাশনা যার মধ্যে থাকে বর্তমান ঘটনা, তথ্যপূর্ণ নিবন্ধ, সম্পাদকীয়, বিভিন্ন ফিচার এবং বিজ্ঞাপন। এটি সাধারণত সাধারণত স্বল্প-মূল্যের কাগজে মুদ্রণ করা হয়।২০০৭ অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী দৈনিক খবরের কাগজের সংখ্যা ছিল ৬,৫৮০টি যারা একদিনে প্রায় ৩৯৫ মিলিয়নের বেশি কপি বিক্রি করত। বর্তমানে বেশীরভাগ সংবাদপত্রই তাদের অনলাইন সংস্করণ বের করে থাকে।বর্তমানে বিভিন্ন প্রকার সংবাদপত্র আমাদের চোখে পরে।
যেমন: দৈনিক পত্রিকা, সাপ্তাহিক পত্রিকা, পাক্ষিক পত্রিকা, বিষয়ভিত্তিক পত্রিকা।
সকালবেলায় এক কাপ গরম ধোঁয়া ওঠা চায়ের সাথে পত্রিকা পড়তে পছন্দ করেন না এমন মানুষ পাওয়া বড় দায় এটি পছন্দ থেকে অনেকের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কিন্তু অনেক কর্মব্যস্ত মানুষের এভাবে সকালটা শুরু হয় না, তারা বাসস্ট্যান্ডের যাত্রী ছাউনী দেয়ালে কিংবা নগরীর নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় যেখানে জনসমাগম বেশি হয় সেরকম কোন এক কংক্রিটের তৈরি দেয়ালে লাগানো পত্রিকাগুলোতে একবার চোখ বুলিয়ে দেশের খবরা-খবর মাথায় নিয়ে কাজে নেমে পড়েন।
বেশিরভাগ সংবাদপত্রের নিজস্ব কার্যালয়ের দেয়ালেও সংবাদপত্রগুলো লাগানো হতো। কিন্তু এখন দেয়াল পত্রিকা আগের মত লাগানো হয় না।
পৃথিবীর প্রথম সংবাদপত্র -১৫৬০ খ্রিস্টাব্দে জার্মান থেকে প্রকাশিত হয়।
পৃথিবীর প্রথম দৈনিক সংবাদপত্র – ১৭০২ খ্রিস্টাব্দে ইংলেন্ড থেকে প্রকাশিত হয়।
ভারতবর্ষের প্রথম সংবাদপত্র ‘বেঙ্গল গেজেট’ (১৭৮০) এটি ইংরেজি পত্রিকা।
বাংলা ভাষার প্রথম পত্রিকা- ‘দিগদর্শন’ (১৮১৮)।
বাংলা ভাষার প্রথম মাসিক পত্রিকা ‘দিকদর্শন’ (১৮১৮)।
বাংলায় সংবাদপত্র: প্রথম বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রিকা সংবাদ প্রভাকর। তারিখ ৫ই ডিসেম্বর ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের আগে এই উপমহাদেশে সংবাদপত্র প্রকাশের কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ মেলে না। ১৭৮০ সালে জেমস অগাস্টাস হিকি স্থানীয় ইংরেজদের জন্য বেঙ্গল গেজেট বা ক্যালকাটা জেনারেল অ্যাডভার্টাইজার নামে দুই পাতার একটি সাপ্তাহিক প্রকাশ করেন। কিন্তু ওয়ারেন হেস্টিংস, তার পত্নী ও ইংরেজ বিচারকদের সম্পর্কে সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশের দরুন এটিও দ্রুত বাজেয়াপ্ত হয়।১৮১৮ সালের গোড়ার দিকে রাজা রামমোহন রায়ের সহায়তায় শিক্ষক ও সংস্কারক গঙ্গা কিশোর ভট্টাচার্য প্রথম বাংলা সাপ্তাহিক বেঙ্গল গেজেট প্রকাশ করেন। অতঃপর ১৮১৮ সালের এপ্রিল মাসে ব্যাপ্টিস্ট মিশনারিদের উদ্যোগে শ্রীরামপুর থেকে বাংলা মাসিক পত্রিকা দিগদর্শন প্রকাশিত হয়। ১৮১৮ সালের ২৩ মে বেঙ্গল গেজেট’ প্রকাশের এক সপ্তাহ পর সমাচার দর্পণ প্রকাশিত হয়।খুলনায় অনেক আগের থেকেই দেয়ালে পত্রিকা টানানোর রেওয়াজ চালু ছিলো। ২০১০ সালের আগেও খুলনার সনামধন্য পত্রিকাগুলো তাদের এককপি প্রতিষ্ঠানের পাশে দেয়ালে টানিয়ে দিত, পাঠকরাও পড়তো বেশ কৌতুহল নিয়ে। কিন্ত ২০২৩ এ এসে এই রেওয়াজের আর দেখা মেলেনা বললেই চলে।
দেয়ালে আগের মত সংবাদপত্র লাগানো হয়না এবং যেখানে লাগাচ্ছে সেখানে মানুষ সংবাদপত্র পড়বার আগ্রহ দেখাচ্ছে না কেন ? এই সম্পর্কে জানতে চাইলে খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং খুলনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি জনাব এস এম জাহিদ হোসেন বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) খুলনা ব্যুরো প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি বলেন, সাধারণত সংবাদপত্রে আজকের ঘটে যাওয়া ঘটনাটি পরেরদিন প্রকাশিত হয় কিন্তু আধুনিক যুগে মানুষের হাতে এখন বিভিন্ন রকম গেজেট থাকায় তারা মুহূর্তেই সদ্য সংবাদ টা জেনে যাচ্ছে। জাতীয় পত্রিকার পাশাপাশি আঞ্চলিক পত্রিকা একটি অঞ্চলের প্রাণ।এক দশক আগেও প্রতিটা সংবাদপত্রের প্রতিষ্ঠানগুলো সকাল হলেই তাদের হকার কিংবা নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি দিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে সহ নগরীর বিভিন্ন দেয়ালে পত্রিকাগুলো লাগিয়ে রাখতেন।কিন্তু এখন সেই নির্দিষ্ট দেয়ালগুলোতে পত্রিকাগুলো লাগানো হয় না।কারণ বর্তমানে একটি সংবাদপত্র প্রকাশে ব্যয় বেড়েছে কিন্তু আয় কমেছে। যার কারণে পত্রিকার মালিক গন আগ্রহ হারাচ্ছেন পাশাপাশি অনেক সময় সার্কুলেশন ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করা হয়। কারন একটি পত্রিকা যখন পড়া হয়ে যাচ্ছে তখন আর সেটি অনেকেই কিন্তু চাইবেন না।তা ছাড়াও তিনি আরও মনে করেন বর্তমান অনলাইন মিডিয়ার যুগ এখন মানুষ সংবাদপত্র,অনলাইন গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা যে কোন ঘটনার সাথে সাথে জেনে যাচ্ছেন ফলে পরের দিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়না।
দীর্ঘ ১১ বছর ধরে দেয়ালে পত্রিকা লাগিয়ে আসছেন খুলনা নগরীর জোড়াগেট এলাকার আব্দুর রহমান তিনি বলেন, আগে এখানে মুড়ির টিনের (খুলনার অভ্যন্তরীণ লোকাল বাস) জন্য যাত্রীরা অপেক্ষা করতেন তখন তার লাগানো পত্রিকাগুলো সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়তেন।এখনো দেয়ালে পত্রিকা লাগানোর ঐতিহ্য ধরে রেখে প্রতিদিনই পত্রিকা লাগান কিন্তু সেগুলো মানুষ পড়েন না লাগানোর পর ছাগলে খেয়ে ফেলে।মাঝে মাঝে দেয়ালের পাশে থাকা চায়ের দোকানের কিছু বেসরকারি চাকরিজীবী চা খেতে এসে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দেয়ালের পত্রিকাগুলো পড়েন বলেই এখনও তিনি পত্রিকাগুলো নিয়মিত লাগান।আগে খুলনা নগরীতে প্রায় ৮ থেকে ১০ জায়গায় দেয়ালে পত্রিকা লাগানো হতো কিন্তু এখন নিয়মিত হয়তোবা ২ কিংবা ৩ জায়গায় লাগানো হয়।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একজন মার্কেটিং অফিসারের কাছে দেয়াল পত্রিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন তো ভাই সব খবর মোবাইলে আসে কিন্তু মোবাইলেও পড়ার সময় হয়ে ওঠে না কাজের অতিরিক্ত চাপের কারণে। তাই যখন এই চায়ের দোকানে চা খেতে আসি এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে পত্রিকাগুলোতে একটু চোখ বুলিয়ে থাকি।
পি এস / এন আই