দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে শরিক দলগুলোর সঙ্গে সহসাই সমঝোতা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
শরিকদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী যারা আছেন, তাদের বিষয়ে কী ধরনের সিদ্ধান্ত আসবে এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আশা করছি খুব সহসা শরিকদের সঙ্গে সমঝোতা হবে। তাদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত আলোচনা চলছে। খুব সহসা ১৪ দলের জোটের সঙ্গে সমঝোতা হবে। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী সব সময় নির্বাচনে থাকে।
তিনি বলেন, আমাদের দল থেকে অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আবার আমাদের দল করে না এমন অনেকেই হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এ প্রার্থীদের অনেকেই বাতিল হয়েছিলেন। দেখা যাচ্ছে যে প্রথমদিন আপিলের পর ৫০ শতাংশের বেশি প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা ফেরত পেয়েছেন। আমি মনে করি, তাদের অংশগ্রহণ নির্বাচনকে উৎসবমুখর করার ক্ষেত্রে সহায়ক হচ্ছে।
বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে দলের অবস্থান কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলের অভ্যন্তরে এটা নিয়ে আলোচনা হয়নি। প্রয়োজন হলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসককে বদলি করা হয়েছে, সেখানে আওয়ামী লীগের বিরোধী প্রার্থীরা বলেছেন, ডিসি আওয়ামী লীগের পক্ষ নিয়েছেন, এতে কি আপনি মনে করেন নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতা দেখাচ্ছে এবং সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার তো কোনোভাবেই কোনো কিছু হস্তক্ষেপ করছে না। করার সুযোগও নাই। কারণ তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চাকরিগুলো কমিশনের কাছে ন্যস্ত হয়। ফলে তাদের পোস্টিং, বদলি সব কিছু নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে যায়। কোনো কিছু করতে হলে কমিশনের অনুমোদন লাগে। অথবা নির্বাচন কমিশন নির্দেশ দিলে সরকার সেটা করতে বাধ্য।
তিনি বলেন, এই যে বিভিন্ন ওসি বদলি, ইউএনও, ডিসি বদলি, এসব এত ব্যাপকভাবে আগে কখনো হয়নি। এতেই প্রমাণিত যে নির্বাচন কমিশন অনেক শক্তিশালী। পাশাপাশি সরকার নির্বাচন কমিশনকে সবদিক থেকে সহায়তা করছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে এবং পরে অনেকেই শঙ্কা-আশঙ্কার কথা বলেছেন। বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসবেন কি না? সেটা নিয়ে নানা জনের নানা মত ছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বিদেশি পর্যবেক্ষক পাঠানোর জন্য অনেক দেশ সম্মত হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ দেশি-বিদেশি সংস্থা, ভারত, জাপান, ফিলিস্তিন, ওয়াইসি পর্যবেক্ষক পাঠাবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছে। সব সময় পর্যবেক্ষকরা যেভাবে আসেন, ঠিক সেভাবেই তারা আসবেন। এতে প্রমাণিত, নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। মানুষ এবং দেশ পুরোপুরিভাবে নির্বাচনমুখী।
তিনি বলেন, যারা নির্বাচনে পর্যবেক্ষকদল পাঠাবে কি পাঠাবে না এ নিয়ে দোলাচলে ছিল, তারা এখন সিদ্ধান্ত নিয়ে পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে। আমি মনে করি, নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসা মানেই একটি সুষ্ঠু-সুন্দর ভালো নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সহায়ক। প্রধানমন্ত্রী বার বার ব্যক্ত করেছেন নির্বাচন কমিশনকে সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে। যাতে করে সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচন হয়।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যারা নির্বাচনে বাধাগ্রস্ত করতে চান, এবং এখনো নির্বাচনে বাধা দেওয়ার পক্ষে অবরোধ ডাকছেন। তারাও বুঝতে পেরেছেন নির্বাচন সুন্দর, স্বচ্ছ এবং ব্যাপক হারে জনগণের অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে হতে যাচ্ছে। সে কারণে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসতে সম্মত হয়েছেন।
প্রার্থীদের হলফনামার বিষয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের হলফনামা নিয়ে যে নিবন্ধ বের হচ্ছে, সেগুলো জনগণ উৎসাহ নিয়ে পড়ছে। আমিও পড়ছি। এগুলো নির্বাচন প্রক্রিয়ার অংশ। পাশাপাশি নির্বাচন প্রক্রিয়া যে স্বচ্ছ তারও বহিঃপ্রকাশ। সব দেশে কিন্তু এভাবে হলফনামা প্রকাশ করা হয় না। ডোনাল ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার পর এবং প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও তিনি তার ট্যাক্স ফাইল প্রকাশ্যে আনেন নাই। আর আমাদের দেশে ট্যাক্স ফাইল প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক।