স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী
আসাদুজ্জামান মিলন, শরণখোলা
“দেশের লাইগা যুদ্ধ করতে যাইয়া মোর বাপে জীবন দেছে। দীর্ঘ ৫০ বছর হের কবরডা অযত্নে অবহেলায় পইরা আলহে। টাহার অভাবে মোরা দুইহান ইটও লাগাইতে পারিনাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দামী পাথর দিয়া হেই কবরডা বান্ধাইয়া দেছে। বাড়ীর মধ্যে ঢুইকা কবরডা দেখলে, যে কেউ বোঝবে এইডা একটা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার বাড়ী। মোগো নাহান শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার গুলা মানুষের ধারে এহন আরও সম্মান পাইবে”
কথা গুলো বলছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চারনভুমি খ্যাত সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলা উপজেলার রসুলপুর গ্রামের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ আলী মীরের পুত্র জাফর মীর (৬৫)। রায়েন্দা রসুলপুর সড়কের কার্পেটিং রোডের পাশেই তার ছোট্ট বাড়ীতে ঢুকতেই দেখা যায় নতুন চকচকে মার্বেল পাথর দিয়ে মোড়ানো তার পিতা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ আলী মীরের সুদৃশ্য কবর। কবরের পাশে দাড়িয়েই হাসি মুখে কথা গুলো বলছিল সে।
একই ধরনের অভিব্যাক্তি প্রকাশ করেন প্রতিবেশী শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সত্তার হাওলাদারের পুত্র শাহ আলম হাওলাদার। তার ভাষায়, দীর্ঘদিন অযত্নে অবহেলায় পইরা থাহা কবরগুলা এহন সুন্দর দেহা যায়। মোরা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মাইয়া, পোলারা সবাই দোয়া হরি। আল্লায় যেন শেখ হাসিনারে আরও অনেক দিন বাচাইয়া রাহে।
মুজিব জন্ম শত বার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ন জয়ন্তী উপলক্ষ্যে বর্তমান সরকার প্রথম পর্যায়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর সংরক্ষনের উদ্যোগ নেয়। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে প্রায় দুই লক্ষ টাকা ব্যয়ে প্রত্যেকটি কবরে মার্বেল পাথর দিয়ে নির্ধারিত ডিজাইনে কবরগুলো সংরক্ষণ করা হচ্ছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে।
শরণখোলা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. এ খালেক খান জানান, এ উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ১৭ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর সংরক্ষনের কাজ শেষ পর্যায়ে। সুদৃশ্য মার্বেল পাথর দিয়ে প্রতিটি কবর নির্মান করতে দুই লক্ষ ১২ হাজার টাকা ব্যায় হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. আফজাল হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সমাধীস্থল সংরক্ষনে সরকারের এ উদ্যোগ একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। দেশের জন্য যারা জীবন দিয়েছেন তাদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গভীর শ্রদ্ধার বহিপ্রকাশ।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজগর আলী জানান, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিব জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এটি সরকারে একটি মহতী উদ্যোগ। দেশের জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন জাতির সেই বীর সন্তানদের প্রতি এটি একটি বিরল সম্মান। ভবিষ্যত প্রজন্ম কবরগুলো দেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশপ্রেমে উদ্ধুব্ধ হবে। মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ নিয়ে ভবিষ্যতে যে কোন গবেষণার কাজে এ কবরগুলো মাইল ফলকের ভূমিকা রাখবে।