দক্ষিণ মেক্সিকোর কেম্প্যাচে শহরে যারা গিয়েছেন, তারা হয়তো একে মনে রেখেছেন এর স্প্যানিশ স্থাপত্যকলা আর মেক্সিকো উপসাগরের আবহাওয়ার মাধ্যমে। কিন্তু কে জানত এর মাটির নিচে লুকিয়ে আছে প্রাচীন এক মায়া নগরের ইতিহাস?
হ্যাঁ, দক্ষিণ মেক্সিকোর জঙ্গলে ঢাকা ওই অঞ্চলে মায়া সভ্যতার এক প্রাচীন শহরের নিদর্শন খুঁজে পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। আর এটি সম্ভব হয়েছে লেজার-সেন্সিং প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে।প্রাচীন ওই জনবসতির ইতিহাস গবেষকদের কাছে তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল বছর দশেক আগেই। কিন্তু তখন সেটি নজরে আসেনি কারও।২০১৩ সালেই গবেষকদের একটি কনসোর্টিয়াম মূলত মেক্সিকোর ওই অঞ্চলে বন উজাড়ের তথ্য পরিমাপের জন্য একটি জরিপ করেছিলেন। সেই ডেটা নতুন করে বিশ্লেষণ করতে গিয়েই ভোজবাজির মতো উঠে এসেছে পুরোদস্তুর এক নগরের চেহারা।
২০১৩ সালের ওই জরিপে লাইডার প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিলেন গবেষকরা, যে প্রযুক্তি এখন হরহামেশাই ব্যবহৃত হয় স্বচালিত গাড়িতে।“আগেই গবেষণার কারণে আমরা জানতাম যে, ওই অঞ্চলটির চেহারা মোটামুটি বদলে দিয়েছিলেন সেখানকার পুরোনো অধিবাসীরা, বিশেষ করে যে অঞ্চলটিকে আমরা এখন কেম্প্যাচে বলে জানি।” – বলেন, আদ্রিয়ানা ভেলাজকুয়েজ মোরলে। তিনি মেক্সিকোর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যানথ্রোপোলজি অ্যান্ড হিস্ট্রি’র পরিচালক ও এই গবেষণার সহ-লেখক।
‘লাইডার’ প্রযুক্তিতে সংগ্রহ করা পুরোনো ডেটা নতুন করে বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রায় ১২২ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছবিতে শনাক্ত হয়েছে মায়াদের প্রায় ৬ হাজার ৪৭৯টি স্থাপনা।এ যেন পুরোদস্তুর এক শহর!গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘অ্যান্টিকুইটি’-তে।এ হারিয়ে যাওয়া শহরটিকে মেক্সিকোর এক উপহ্রদের নামের সঙ্গে মিলিয়ে ‘ভ্যালেরিয়ানা’ নামে বর্ণনা করেছেন গবেষকরা।
প্লেন থেকে ছুড়ে দেওয়া হাজার হাজার লেজার পালস ব্যবহার করে বিভিন্ন ভূদৃশ্যের মানচিত্র তৈরি করেছে লাইডার প্রযুক্তিটি। এতে করে এমন বিভিন্ন চিহ্ন ফুটে উঠেছে যা খালি চোখে দেখা যায় না।লাইডার হচ্ছে এক ধরনের লেজার স্ক্যানার ও রিমোট সেন্সিং পদ্ধতি, যা লেজার ছুড়ে দিয়ে গতিশীল বস্তুর দূরত্ব পরিমাপ করতে পারে।লাইডার ব্যবহার করে পাওয়া এসব তথ্য ফের পরীক্ষার সময় জঙ্গল জরিপের এক অদ্ভুত গঠন লক্ষ্য করেন ‘তুলানে ইউনিভার্সিটি’র স্নাতক ছাত্র লুক অল্ড-টমাস।
লাইডার-এর ছবিতে দেখা গেছে মায়াদের মন্দিরের মঞ্চ, উঠান, ঘরবাড়ি, কৃষিকাজের যন্ত্র, এমনকি বাঁধের মতো নানা কাঠামো। মেক্সিকোর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট বলেছে, এসব কাঠামো ২৫০ থেকে ৯০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তৈরি হলেও এখানে মায়াদের উপনিবেশ শুরু হয়েছে তারও ১০০ বছর আগে।‘তুলানে ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক মার্সেলো ক্যানুটো বলেছেন, “আমাদের এই বিস্তৃত তথ্য প্রাচীন মায়ানদের গল্প আরও ভালভাবে বলতে মানুষদের সাহায্য করবে।”
“আমরা এরইমধ্যে প্রাচীন সভ্যতা মায়া সম্পর্কে অনেক কিছুই জানি। তারা আমাদের জন্য রেখে গেছেন বিস্ময়কর নানা নিদর্শন। আমরা এখন মায়াদের বসতি ও জনসংখ্যার সঙ্গে এসব তথ্যকে মিলিয়ে দেখতে পারব। জবাব মিলবে, তারা কী নিয়ে লড়াই করেছে, তাদের শাসন ব্যবস্থা কেমন ছিল ও তাদের বাণিজ্যের ধরনই বা কেমন ছিল- এমন সব প্রশ্নের।”
‘ইউনিভার্সিটি অফ ফ্লোরিডা’র নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক সুসান ডি গিলেস্পি এ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তিনি বলছেন, এক্ষেত্রে লাইডার প্রযুক্তি এক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে। তবে মায়াদের সম্পর্কে এসব তথ্য মাঠ পর্যায়ে গবেষকদের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।