কক্সবাজারের উখিয়ার শফিউল্লাহ কাটা (ক্যাম্প-১৬) রোহিঙ্গা শিবিরে আবারও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
রোববার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। দুই ঘণ্টা ধরে আগুনে পুড়ে গেছে অন্তত ১ হাজার ২০০টি বসতি।
ফায়ার সার্ভিস, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তবে রাত আটটা পর্যন্ত হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। তাদের বিভিন্ন কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হচ্ছে।
পুলিশ জানায়, গত বছর ২২ মার্চ উখিয়ার বালুখালীসহ ৫টি আশ্রয়শিবিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বসতি পুড়ে ছাই হয়। এ সময় মৃত্যু হয় ৬ শিশুসহ অন্তত ১১ জন রোহিঙ্গার। আহত হয় প্রায় ৪৫০ জন। গৃহহীন হয়েছিল ৪৫ হাজার মানুষ।
সর্বশেষ ২ জানুয়ারি উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের ২০ নম্বর ব্লকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একটি করোনা আইসোলেশন সেন্টার পুড়ে যায়। একাধিক পাহাড়ের ঢালুতে গড়ে ওঠা ঘনবসতির এই রোহিঙ্গা শিবিরে বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও নিরাপদ বসবাস নিশ্চিত করা যায়নি বলে দাবি রোহিঙ্গা নেতাদের। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ।
গ্যাস চুল্লি থেকে আগুনের সূত্রপাত:
রোহিঙ্গা শিবিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়েনের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন বলেন, শফিউল্লাহ কাটা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি/১ ব্লকের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলীর ঘরে গ্যাসের চুল্লি থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর দ্রুত আগুন চারদিকের ঘরবাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে এপিবিএন, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি। আগুনে পুড়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০টি বসতি।
আগুনে পুড়েছে রোহিঙ্গা নারী সাখিনা বেগমের (৪৫) পলিথিন আর বাঁশের তৈরি ঝুপড়ি বসতি। এখন তিনি তিন সন্তান নিয়ে পাশের পাহাড়ের ঢালুর এক আত্মীয়ের বাসার অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেন, মুহূর্তের মধ্যে আগুন তাঁর বসতিতে ছড়িয়ে পড়ে। ঘর থেকে সন্তানদের নিয়ে কোনোমতে দূরে সরে প্রাণ রক্ষা করেছেন। কিন্তু ঘরে খাবারদাবার, জামাকাপড়, টাকাপয়সা সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তীব্র শীতে কাপড়চোপড় নিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাঁদের।
অগ্নিকাণ্ডে আরেক গৃহহীন রোহিঙ্গা সাইফুল করিম (৩৫) বলেন, এনজিও থেকে জ্বালানি হিসেবে কাঠের পরিবর্তে প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারে গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে আসছে। কিন্তু রোহিঙ্গা নারীরা গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে তেমন অভ্যস্ত না। এ কারণে বারবার গ্যাস সিলিন্ডার থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। তা ছাড়া রোহিঙ্গা বসতিগুলো ত্রিপলের ছাউনি ও বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি, একটার সঙ্গে আরেকটা লাগানো। ঘনবসতির কোনো ঘরে আগুন ধরলে অন্য বসতিগুলো রক্ষার বিকল্প উপায় নেই।
উখিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাজ উদ্দিন বলেন, ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ১০টি বসতবাড়িও পুড়ে ছাই হয়েছে। তাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাবার ও শীতের কাপড়চোপড় দেওয়া হয়েছে।
তাজ উদ্দিন আরও বলেন, অগ্নিকাণ্ডে যাদের ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে কিংবা গৃহহীন হয়েছে, তাদের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের মাধ্যমে আশ্রয়শিবিরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাখার ব্যবস্থা হয়েছে। রাতের মধ্যে গৃহহীনদের সরিয়ে আনা হবে। সেখানে তাদের শীতের কাপড়চোপড়সহ রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।
পিএসএন/এমআই