২৪ এপ্রিল ২০১৩—এই দিনটিতে ধসে পড়ে সাভারের নয়তলা ভবন ‘রানা প্লাজা’। এ ঘটনায় নিহত হন সহস্রাধিক শ্রমিক। এক যুগ পেরিয়ে গেলেও থামেনি স্বজনদের কান্না, মেলেনি নিখোঁজদের হদিস। আতঙ্ক ভুলতে পারেননি আহতরাও।
গাইবান্ধার বিভিন্ন উপজেলা—সুন্দরগঞ্জ, সাদুল্লাপুর ও গোবিন্দগঞ্জে এখনও টিকে আছে সেই ভয়াল দিনের যন্ত্রণার চিহ্ন। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, আহত ও নিহতদের পরিবার আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন অপূরণীয় ক্ষতির ভার। নিহতদের অধিকাংশই ছিলেন হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান, যারা জীবিকার টানে ছুটেছিলেন রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে।
স্মৃতিরানীর স্বপ্ন থেমে যায় ধ্বংসস্তূপে
সাদুল্লাপুর উপজেলার কিশামত দশলিয়ার শ্রী পঞ্চনন বাবুর একমাত্র মেয়ে স্মৃতিরানী (২০) রানা প্লাজার সপ্তম তলায় গার্মেন্টস কারখানায় ফিনিশিং সেকশনে হেলপার হিসেবে কাজ করতেন। ভবন ধসে তার মৃত্যু হয়। আজও স্তব্ধ তার পরিবার।
ইউনুছ আলীর মরদেহ ফেরে ১১ দিন পর
নিহত ইউনুছ আলী একই ভবনের শ্রমিক ছিলেন। ২৪ এপ্রিল সকালে কাজে গিয়ে আর ফিরতে পারেননি। ধসের ১১ দিন পর উদ্ধার হওয়া মরদেহ দাফন করা হয় পারিবারিক কবরস্থানে।
এক যুগেও মেলেনি নিখোঁজ কামনার খোঁজ
গাইবান্ধার দামোদরপুর গ্রামের কামনা বেগম (২৫) ভবনের পঞ্চম তলায় হেলপার হিসেবে কাজ করতেন। ভবন ধসের পর থেকে নিখোঁজ। তার মা মফিজান বেগম আজও মেয়ের ছবি বুকে চেপে রাখেন। মাঝে মধ্যে সাভারে গিয়েও মেয়ের খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
মা হারা জেরিন বেড়ে উঠছে দাদীর কোলে
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারানো লিপি বেগমের একমাত্র মেয়ে জেরিন আক্তার (১৪) এখন দাদী জেলেখা বেগমের কোলে মানুষ হচ্ছে। দামোদরপুর গ্রামের এই কিশোরী এখনো মায়ের শূন্যতা পূরণ করতে পারেনি।
আতঙ্কে আজও দিন কাটে আহত দম্পতির
দামোদরপুরের জিয়াউর রহমান ও মনিফা বেগম রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধার হন। আজও তাদের মনে সেই দিনের আতঙ্ক জেগে থাকে। “মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি, এখনও রাতে ঘুম ভেঙে কেঁদে উঠি”—বললেন এই দম্পতি।
ইউপি চেয়ারম্যানের বক্তব্য
দামোদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “রানা প্লাজা ধসে আমাদের এলাকা থেকে অন্তত ২০ জন শ্রমিক হতাহত হয়েছেন। এখনও কয়েকজন নিখোঁজ। আমরা পরিষদের পক্ষ থেকে সহায়তা অব্যাহত রেখেছি।”
এক যুগ পেরিয়ে…
সময় চলে গেলেও রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের মর্মান্তিক স্মৃতি মুছে যায়নি। আজও সেই ঘটনার ভার বয়ে চলেছেন গাইবান্ধার অসংখ্য পরিবার। তাদের চোখে এখনো ফিরে আসে ধুলোমাখা প্রিয়জন, যাদের অনেকের খবরই মিলেনি।