করোনার বিস্তার প্রতিরোধের কথা বলে উন্মুক্ত স্থানে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের সরকারি অপপ্রয়াস বলে মনে করে বিএনপি।
মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গণমাধ্যমকে জানান এসব কথা বলেন।
এতে তিনি বলেন, জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেখানে বদ্ধ স্থানের চেয়ে উন্মুক্ত স্থানে ওমিক্রন ও কোভিড-১৯ এর বিস্তারের সম্ভাবনা কম বলেছে, সেখানে হাট-বাজার, শপিংমল, স্কুল-কলেজ ইত্যাদি স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উন্মুক্ত স্থানে সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সমাবেশ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। চলমান নির্বাচনী প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখে রাজনৈতিক সমাবেশ বন্ধ রাখা অগ্রহণযোগ্য।
মির্জা ফখরুল জানান, অকারণে ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির জনসমাবেশে সরকার, সরকারি দল একক কিংবা যৌথভাবে বাধা সৃষ্টির পরও জনগণ তা প্রতিহত করে সফলভাবে সমাবেশ করেছে। এ কারণে সরকার জনগণের এই স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ, আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য কোভিড-১৯ এবং ওমিক্রনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে।
তিনি বলেন, দলীয় সভায় সম্প্রতি জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে রাতের ভোটে নির্বাচিত সরকার প্রধানের জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার দাবিকে হাস্যকর ও নিম্নমানের রসিকতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বিশেষ করে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের তথাকথিত নির্বাচনী প্রহসনের বিষয়টি দেশ-বিদেশে বহুল ভাবে সমালোচিত এবং সমানভাবে প্রত্যাখ্যাত।
তিনি আরও বলেন, অবৈধ সরকারের প্রধান বক্তৃতায় তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করলেও সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু এজন্যই বলেননি কারণ তাহলে জনগণ প্রকৃত তথ্য জেনে যাবে। বাস্তবতা হলো-বছরের পর বছর ধরে এই সরকার জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করে চলেছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে অগণতান্ত্রিক পন্থায় দমনের জন্য গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা, নিপীড়ন, মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার, হয়রানি এবং নির্যাতন চালিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন মাতৃভূমিকে আতঙ্কের জনপদে পরিণত করেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ও কংগ্রেসের দ্বি-দলীয় যৌথ গ্রুপ, যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটি, টম ল্যানটস হিউম্যান রাইটস কমিশন, ব্রিটিশ ও অষ্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্টসহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক সংগঠন ও গণতান্ত্রিক বিশ্বের বহু দেশের সংসদে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি, বিরুদ্ধ মতাবলম্বীদের দমনে অমানবিক কঠোরতা, গুম, খুন এবং নির্বাচনী প্রহসনের বিষয়ে আলোচনা ও সুপারিশ করা হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালের মত বিশ্বখ্যাত মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান এবং অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম অসংখ্য জরিপ রিপোর্ট ও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কিন্তু সরকারের আচরণে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি বরং স্বৈরাচারী সরকার ক্রমান্বয়ে ফ্যাসীবাদী হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, যে নাগরিকদের গুম, খুন, নির্যাতন করা হচ্ছে তাদের অর্থ দিয়েই এই সরকার একাধিক লবিষ্ট নিয়োগ করে ব্যর্থ হয়েছে। আর এই ব্যর্থতার ক্ষোভ থেকেই সরকার প্রধান এখন জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য ষড়যন্ত্রের কথা বলছেন। বিএনপি মনে করে যে, ক্ষমতার মোহে বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকারই ষড়যন্ত্র করে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করেছে; দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং অপশাসনের দ্বারা জনগণকে ক্রমবর্ধমান ঋণের বেড়াজালে আবদ্ধ করেছে এবং ক্রমাগত জনগণের মৌলিক মানবাধিকারগুলো হরণ করে বিশ্ব দরবারে দেশের মর্যাদা ধ্বংস করে দিয়েছে।
পিএসএন/এমঅাই