বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর দখল করার দাবি জানিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) ।
শুক্রবার রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে আরাকান আর্মি বলেছে, দুই সপ্তাহের তীব্র লড়াইয়ের পর শুক্রবার রাখাইনে পশ্চিমাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ডের পতন ঘটেছে।
রয়টার্স বলছে, এএ-র দাবি সত্য হলে এটি মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর দ্বিতীয় আঞ্চলিক সামরিক কমান্ডের পতনের ঘটনা হবে। এর আগে গত আগস্টে আরাকান আর্মি শান রাজ্যের বৃহত্তম শহর লাশিওর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেখানকার আঞ্চলিক সামরিক কমান্ডের পতন ঘটিয়েছিল। মিয়ানমারের ইতিহাসে প্রথম কোনো আঞ্চলিক সামরিক কমান্ড পতনের ঘটনা ছিল সেটি।
মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তা বাহিনী দেশব্যাপী বিদ্রোহীদের সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধে ক্রমবর্ধমান বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে, এএ-র এ দাবিতে তেমন ইঙ্গিত আরও জোরদার হয়েছে।
এ নিয়ে মন্তব্য জানার জন্য শনিবার মিয়ানমারের সামরিক সরকারের মুখপাত্রের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
মিয়ানমারের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয়ী নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয় সামরিক বাহিনী। তারপর থেকেই মিয়ানমারজুড়ে অস্থিরতা চলছে। সামরিক অভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভ রক্তপাতের মধ্য দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার পর জান্তা বিরোধীরা অস্ত্র তুলে নিয়ে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে।
আরাকান আর্মি (এএ) জান্তাবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর সমন্বয়ে গঠিত থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের অংশ। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে সমন্বিতভাবে সরকারি বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে তারা। চীন সংলগ্ন মিয়ানমারের সীমান্ত অঞ্চলে উল্লেখ করার মতো বিজয়ও অর্জন করে তারা।
রাখাইন বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী একটি উপকূলীয় রাজ্য। রাজ্যটির উপকূলে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ ও কিয়াঅক পাইয়ুতে একটি পরিকল্পিত অর্থনৈতিক অঞ্চল থাকলেও এটি মিয়ানমারের দরিদ্রতম অঞ্চলগুলির মধ্যে একটি। কিয়াঅক পাইয়ু থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে চীনে তেল ও গ্যাস পাঠানো হয়।
আরাকান আর্মি ও জান্তার মধ্যে হওয়া অস্ত্রবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর গত নভেম্বরে রাখাইনে আবার লড়াই শুরু হয়। এরপর থেকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ধারাবাহিকভাবে অনেকগুলো জয় পেয়েছে। রাখাইন মিয়ানমারের প্রধানত মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়েরও অবাসস্থল।
কিছু রোহিঙ্গা কর্মী অভিযোগ করেছেন, আরাকান আর্মি উত্তর রাখাইনে অভিযান চালানোর সময় রোহিঙ্গাদেরও হামলার লক্ষ্যস্থল করেছে। এর ফলে প্রায় লাখো রোহিঙ্গা নিরাপত্তার জন্য প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে পালাতে বাধ্য হয়।
তবে আরাকান আর্মি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে, জানিয়েছে রয়টার্স।