কিডনি রোগীদের অনেকেরই জটিলতার কারণে রোজা রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে যাদের কিডনির সমস্যা সামান্য বা মৃদু, তারা রোজা রাখতে পারেন। এ ক্ষেত্রে খাবার বাছাইয়ে হতে হবে সতর্ক। এই রোগীদের ইফতার থেকে সাহ্রি পর্যন্ত কিডনিবান্ধব নয় এমন খাবার এড়াতে হবে।
Advertisement
ডাবের পানি: অনেকে ডাবের পানি দিয়ে ইফতার শুরু করেন। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি থাকে। ফলে তাদের উচ্চ পটাশিয়ামযুক্ত খাবার বর্জন করতে হয়। ১ কাপ ডাবের পানিতে দৈনিক চাহিদার ১৬ শতাংশ পটাশিয়াম থাকে। তাই কিডনি রোগীর শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি থাকলে রোজায় ডাবের পানি এড়ানোই ভালো।
খেজুর ও শুকনো ফল: খেজুর-কিশমিশসহ অন্যান্য শুকনো ফলে পুষ্টি উপাদানের ঘনত্ব অনেক বেশি থাকে। বিশেষ করে প্রোটিন, মিনারেলস ও ভিটামিন। রোজায় অনেকেই ইফতার শুরু করেন খেজুর দিয়ে। কিন্তু খেজুরও পটাশিয়ামসমৃদ্ধ। কাজেই যেসব কিডনি রোগীর পটাশিয়াম বাড়তি, তাঁদের খেজুর খাওয়া যাবে না।
ডাল ও বীজজাতীয় খাবার: রোগের অবস্থাভেদে দ্বিতীয় শ্রেণির উদ্ভিজ্জ প্রোটিন বাদ দিতে হবে বা কম খেতে হবে। রোজায় ডাল ও ডালের তৈরি পেঁয়াজু, ছোলা, চটপটি ইত্যাদি এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। বেসনের পরিবর্তে সাদা চালের গুঁড়ো, ময়দা ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া বীজজাতীয় খাবার ও ঘুগনি খাওয়া যাবে না।
বেসন ও দইবড়া: রোজায় মূলত বেসন দিয়েই বেগুনি, আলুর চপ, মিষ্টিকুমড়াসহ অন্যান্য বড়া ভাজা হয়। বেসন মূলত তৈরি হয় ডাল দিয়ে। তাই বেসন দিয়ে ভাজা যেকোনো খাবার বাদ দিতে হবে। এ ছাড়া দইবড়া তৈরিতেও ডাল ও টক দই ব্যবহার হয়। কাজেই এগুলোও এড়ানো ভালো।
হালিম: হালিম সাধারণত মিক্সড ডাল ও গরু-খাসির মাংস দিয়ে তৈরি একটি উচ্চমাত্রার প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার। তাই কিডনি রোগীর খাদ্যতালিকা থেকে এটি বাদ দেওয়াই ভালো।
দই-চিড়া-কলা: দই স্বাস্থ্যকর খাবার। তবে কলায় আছে উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম। চিড়ায়ও পটাশিয়াম থাকে। তাই এ নিয়েও সতর্ক হতে হবে। তবে অবস্থাভেদে ১ কাপ দুধের বিকল্প হিসেবে মাঝেমধ্যে দই রাখা যেতে পারে।
মাছ–মাংস: কিডনি রোগীর ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণির প্রাণিজ প্রোটিনকে প্রাধান্য দিতে হবে। যেমন, ডিমের সাদা অংশ, মাছ, মুরগির বুকের মাংস (ইফতার ও সাহ্রিতে মোট দুই টুকরো) ও লো-ফ্যাট দুধ (১ কাপ) বা দই। রোজায় গরু-খাসির মাংসের তৈরি কাবাব, কলিজা-মগজের আইটেম ইত্যাদি অবশ্যই বাদ দিতে হবে।
ফল: রোজায় ফল খেতে বলা হলেও কিডনি রোগীদের সাইট্রাসজাতীয় টক ফল যেমন লেবু, কমলা, মাল্টা, আমলকী এবং উচ্চ পটাশিয়ামযুক্ত ফল খাওয়া যাবে না। উচ্চ পটাশিয়ামযুক্ত ফলের মধ্যে কলা, তরমুজ, ডালিম, কমলা অন্যতম। তবে আপেল, নাশপাতি, পাকা পেয়ারা, পাকা পেঁপে, আনারস, লাল আঙুর, কাঁঠাল, বরই ইত্যাদি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যাবে।
শাকসবজি: আলু, মিষ্টি আলুতে পটাশিয়াম থাকে। কাজেই রোজায় আলুর তৈরি কোনো খাবার বা আলুর চপ বেশি খাওয়া যাবে না। পালংশাকে কলার চেয়েও বেশি পটাশিয়াম থাকে। বাঁধাকপি, ফুলকপি, ঢ্যাঁড়স, সাদা মুলা, শজনে, কাঁচা পেঁপে, পাটশাক, পুঁইশাক, মুলাশাক, কলমি শাক ইত্যাদিও পটাশিয়ামসমৃদ্ধ। এসব শাকসবজি এড়ানোর বা কম খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
এ ছাড়া রোগের অবস্থাভেদে ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী লবণ, পানি ও মোট তরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সঠিকভাবে নিয়ম মেনে খাবার খেতে পারলে কিডনি রোগ নিয়েও রোজা রাখা সম্ভব।