আমাদের শরীরে প্রায় ৬০ হাজারের মতো রক্তনালি আছে। যেগুলো আমাদের হৃদপিণ্ডসহ শরীরের সব অঙ্গে রক্ত সরবরাহ করে। যদি কোনো কারণে শরীরের রক্ত সঞ্চালন কমে যায় বা কোনো রক্তনালী ব্লক হয়ে যায়; তাহলে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তখন পুরো শরীরের রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। শরীরের রক্ত সঞ্চলন ক্ষমতা কমে গেলে সব কোষে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছায় না। তাই শরীরের রক্ত সঞ্চালন যাতে স্বাভাবিক রাখতে বেশ কিছু বিষয় মেনে চলা জরুরি।
দুর্বল রক্ত চলাচলের উপসর্গ
যখন শরীরের অঙ্গগুলোতে রক্ত সরবরাহ কমে যায়; তখন হাত পা ঠান্ডা ও অসাঢ় মনে হতে পারে। ত্বক যদি অনেক পাতলা হয় তাহলে অনেক সময় ত্বকে নীলচে ভাব দেখা যায়। দুর্বল রক্ত চলাচলের ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, নখ ভেঙে যায় ও চুল পড়ার সমস্যা বেড়ে যায়। ডায়াবেটিসের রোগীদের ক্ষেত্রে যেকোনো আঘাতের স্থানে ব্যথা ও ফোলাভাব সহজে কমে না।
কীভাবে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়াবেন?
ধূমপান বন্ধ করুন: সিগারেটের প্রধান উপাদান নিকোটিন। নিয়মিত ধূমপান করলে শিরা ও ধমনীর প্রাচীরগুলো নষ্ট হতে থাকে। পাশাপাশি রক্তকে গাঢ় ও ভারী করে দেয়। এ কারণে নালি দিয়ে রক্ত স্বভাবিক প্রক্রিয়ায় চলাচল করতে পারে না। তাই যতো দ্রুত সম্ভব ধূমপান ত্যাগ করুন।
রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন: অতিরিক্ত রক্তচাপ বেড়ে গেলে আর্টেরিওকোলেসিস রোগ হয়। যা রক্ত চলাচলের জন্য ধমনীর রাস্তাগুলো বন্ধ করে দেয়। এর ফলে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে। তাই রক্তচাপের পরিমাণ ৮০-১২০ এর মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন। তবে বয়স ও ওজন অনুযায়ী মাত্রা ভিন্ন হতে পারে।
প্রচুর পানি পান করুন: বলা হয়ে থাকে রক্তের অর্ধেকাংশই পানি। তাই চেষ্টা করুন সবসময় হাইড্রেটেড থাকার। প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন। আর ওয়ার্ক আউট করলে বা বাইরে থাকলে আরও বেশি পানি পান করতে হবে।
হাঁটাচলার অভ্যাস গড়ুন: একটানা বসে থাকলে অনেক সময় রক্ত চলাচলের বিঘ্ন ঘটে। এক্ষেত্রে হাত ও পায়ের পেশীগুলো অসাঢ় হয়ে থাকে। এ কারণে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে এবং রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
তাই আপনি যদি এমন কাজ করেন; যেখানে অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয় কিংবা ডেস্কে কাজ করতে হয়; তাহলে চেষ্টা করুন আধা ঘণ্টা পরপর উঠে দাঁড়াতে ও একটু হাঁটাচলা করতে। এক্ষেত্রে হাত ও পায়ের পেশীগুলো সচল হয় ও রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ইয়োগা করুন: রক্ত চলাচল সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখার জন্য ইয়োগা একটি কার্যকরী অনুশীলন। ইয়োগার মাধ্যমে আমাদের শরীরের কোষগুলোতে অক্সিজেন দ্রুত পৌঁছায়। বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির কারণে শরীরের প্রতিটি অঙ্গে রক্ত পৌঁছায় দ্রুত। তাই নিয়মিত ইয়োগা করুন।
শরীরচর্চা করুন: যদি ইয়োগা করতে ভালো না লাগে; তাহলে বিছানায় বা ম্যাটে শুয়ে দেয়ালে পুরো পা উঁচু করে কিছুক্ষণ রাখুন। পায়ের পেশীতে ব্যথা বা ফোলা থাকলে এই ব্যায়ামের মাধ্যমে পায়ের ব্যথা কমানো যায় ও রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়।
শরীরের প্রতিটি স্থানে বেশি অক্সিজেন পৌঁছানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে নিয়মিত শরীরচর্চা করা। নিয়মিত দৌঁড়, বাইক চালানো, সাঁতার কাটা কিংবা হাঁটার মাধ্যমে শরীরে অনেক বেশি অক্সিজেন পৌঁছায়। যা আপনার হৃদপিণ্ডকে অনেক বেশি শক্তিশালী করে ও রক্তচাপ কমায়। তাই প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করুন।
স্কোয়াট করুন: দাঁড়ানো অবস্থায় কোমড়ে দুই হাত রেখে সোজা হয়ে অর্ধেক বসার চেষ্টা করবেন। চেয়ারের বসার মতো করে অদৃশ্যভাবে বসে থাকার মতো করে এই অনুশীলনটি করতে হবে। এতে করে শরীরের রক্তে সুগারের মাত্রা কমে ও পিঠ ব্যথা সেরে যায়।
সঠিক মোজা নির্বাচন: অতিরিক্ত টাইট মোজা বা অতিরিক্ত ঢিলা মোজা দুটোই রক্ত চলাচলে অসুবিধা করতে পারে। তাই কোন সাইজের মোজা পড়বেন তা আগে থেকেই নির্বাচন করুন।
মাংস নয় শাক-সবজি ও ফলমূল খান: খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন মৌসুমী ফল ও শাক-সবজি রাখবেন। এসবে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিগুণ শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক ও সুস্থ রাখে।
আর মাংস, তেলযুক্ত খাবার, চিজ ইত্যাদি খাবারের ফলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। রক্ত জমাট বাঁধার কারণ হতে পারে এসব খাবার। তাই চেষ্টা করুন চর্বি জাতীয় খাবারের পরিবর্তে রঙিন শাক-সবজি ও ফলমূল খাওয়ার।
নিয়মিত শরীর মাজুন: গোসলের পূর্বে পুরো শরীরের পা থেকে মাথা পর্যন্ত একটি ভালো মানের লোফার বা স্ক্রাবার দিয়ে শরীর মাজুন। এতে ত্বক যদি শুষ্ক হয় তাহলে রক্ত চলাচল অনেকটাই স্বাভাবিক ও সুস্থ থাকবে।
হট শাওয়ার নিন: হট ওয়াটার বা গরম পানি শরীরের রক্ত চলাচল অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয় ও শরীর সুস্থ রাখে। তাই সবসময় চেষ্টা করুন গোসলের সময় হালকা গরম পানি ব্যবহার করতে। এ ছাড়াও নিয়মিত রং চা খেলেও রক্ত চলাচল বাড়ে।