ব্রণ দেহের কোথায় হচ্ছে আর কোন সময়ে উঠছে; সমস্যা সমাধানে এসব বিবেচনা করা জরুরি।
ব্রণের সমস্যায় ভোগেনি এমন মানুষ হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেল্থ’য়ের তথ্যানুসারে গড়ে ১০জনের মধ্যে একজন ত্বকের এই সমস্যায় পড়েন।
এর থেকে পরিত্রাণ পেতে কী কারণে হচ্ছে সেটা জানার দরকার পড়ে।
হরমোনের কারণে যেরকম ব্রণ হয়
“দেহে হরমোনের ওঠা-নামার কারণে এই ব্রণ ওঠে। যা ব্যথাযুক্ত, গভীর, দানাদার হয়। আর মুখমণ্ডলের নিচে ও গলায় হয়ে থাকে”- রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এভাবেই ব্যাখ্যা করেন মার্কিন চর্মরোগবিশেষজ্ঞ ব্রুক জেফি।
অ্যারিজোনা ভিত্তিক এই চিকিৎসক আরও বলেন, “উঠতি তরুণ ও নারীদের মাঝে সাধারণত দেখা যায়; বিশেষ করে মাসিক, গর্ভাবস্থা বা রজঃবন্ধ হলে। এই সময়ে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা থেকে ত্বকের তেল নিঃসরণ বাড়ে। যা লোমকূপ বন্ধ করে ব্যাকটেরিয়াগজানোর পরিবেশ তৈরি করে দেয়।”
হাডসন নিবাসী ত্বক-বিশেষজ্ঞ ডা. কিরান মিয়ান এই বিষয়ে আরও জানান, মাসিকের সময়ের সাথে মিলিয়ে চক্রাকারে এই হরমোনার ব্রণ উঠতে দেখা যায়।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, “মাসিক শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ বা ঠিক আগে আগে এই ধরনের ব্রণের সমস্যা শুরু হয়। মুখের নিচে, চোয়াল বরাবর, চিবুকেই বেশি ওঠে। কোনো কোনো সময় কপালে ও গালেও উঠতে দেখা যায়।”
প্রতিকার: সাধারণত দুই পর্যায়ে হরমোনাল ব্রণের চিকিৎসা করা হয়। প্রথমত লোমকূপ পরিষ্কার করে আর দ্বিতীয় ধাপ হল ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে হরমোনের বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ।
স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, বেঞ্জোয়েল পারোক্সাইড এবং রেটিনয়েডস সমৃদ্ধ প্রসাধনী দিয়ে মুখ পরিষ্কার করার পাশাপাশি চিকিৎসকের মতানুসারে ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন- ডা. জেফি।
এছাড়া মানসিক চাপের হরমোন কর্টিরসল বৃদ্ধি কারণেও ব্রণ হয়। এই হরমোন নিয়ন্ত্রণ করতে পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন।
আর ত্বকে অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ কমাতে দুগ্ধজাত খাবার এড়ানো উপকারী।
ব্যাক্টেরিয়ার কারণে হওয়া ব্রণ
অতিরিক্ত ব্যাকটেরিয়াআক্রমণে হওয়া ব্রণ দেখতে ফুসকুড়ির মতো লাগে। আর মুখ বা শরীরের যে কোনো জায়গায় দেখা দিতে পারে- বলেন ডা. মিয়ান।
তবে বেশিরভাগ সময় যেখানে তেল নিঃসরণ বেশি হয় সেখানেই বেশি ওঠে; যেমন- কপাল, গাল বা নাক।
তিনি আরও বলেন, “এই ব্রণ চক্রাকারে ফিরে আসে না। লালচে ও বেশিরভাগ সময় ব্যথাযুক্ত হয়।”
ব্যথা থাকুক বা না থাকুক এগুলো নরম থাকে, যে কারণে চেপে ভেতরের রস বের করে দিতে ইচ্ছে হয়। তবে ডা. মিয়ান এই কাজ না করার পরামর্শ দেন।
প্রতিকার: ব্যাকটেরিয়াকারণে ত্বকে কী পরিমাণ ব্রণ উঠেছে সেই হিসেবে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
সাধারণত বেঞ্জোয়েল পারোক্সাইড সমৃদ্ধ ফেইসওয়াশ ব্যবহারে উপকার মেলে। সাথে ব্যাক্টেরিয়া-রোধী উপাদান যেমন ‘ক্লিন্ডামাইসিন’ সমৃদ্ধ লোশন মেখে ব্যাক্টেরিয়া জন্মানোর পরিমাণ কমানো যায়।
“এগুলো ব্যাকটেরিয়ারকারণে হওয়া ব্রণ সারাতে সাহায্য করে”- বলেন ডা. মিয়ান।
আরও মনে রাখতে হবে ত্বকের তেল ‘সিবাম’ হল ব্যাক্টেরিয়ার খাদ্য। তাই রেটিনয়েড ব্যবহারে ত্বকের তেল নিঃসরণ কমাতে পারলে আরও উপকার পাওয়া যায়।
দুগ্ধজাত খাবার প্রদাহ সৃষ্টি করে। তাই এসব এড়ালে ব্রণ থেকে মুক্তি মেলে দ্রুত।
ডাক্তারের কাছে যখন যাওয়া প্রয়োজন
তিন মাসের মধ্যে ব্রণের সমস্যা ঠিক না হলে ত্বক-বিশেষজ্ঞ বা চর্মরোগের দ্বারস্থ হতে হবে।
ডা. জেফি বলেন, “প্রতিনিয়ত ব্রণ হতে থাকলে সেগুলো খুঁটলে ত্বকে স্থায়ী দাগ হয়ে যায়। তাই চিকিৎসকার প্রয়োজন রয়েছে। তখন সাধারণ ত্বক পরিচর্যায় সুফল পাওয়া যায় না।”
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে চললে সপ্তাহখানেকের মধ্যে পরিষ্কার ত্বকের অধিকারী হওয়া সম্ভব হয়।