টানা আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিকে সহায়তা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের একাধিক দেশ।
বিশেষ করে অস্ত্র দেওয়ার পাশাপাশি দেশটিকে ব্যাপকভাবে সামরিক তহবিলও জুগিয়ে এসেছে ওয়াশিংটন। তবে পরিস্থিতি এখন ভিন্ন। ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর ধারণা করা হচ্ছে তিনি হয়তো ইউক্রেনের জন্য সহায়তা কমাবেন।
এমন অবস্থায় যুদ্ধে পরাজয়ের শঙ্কা ব্যক্ত করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা কমিয়ে দিলে “আমরা হেরে যাব”। বুধবার (২০ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে সামরিক তহবিল কমিয়ে দিলে ইউক্রেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে “হারবে” বলে মঙ্গলবার ফক্স নিউজকে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। মার্কিন এই টেলিভিশন নেটওয়ার্ককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “যদি তারা সহায়তায় কাট-ছাট করে, তাহলে আমরা— আমি মনে করি, আমরা হারব।”
ইউক্রেনীয় এই প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, “আমরা লড়াই করব। আমাদের নিজস্ব উৎপাদন আছে, কিন্তু তা যুদ্ধে জয় পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। এবং আমি মনে করি এটি বেঁচে থাকার জন্যও যথেষ্ট নয়।”
এএফপি বলছে, ২০২২ সালে রাশিয়ান আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেনকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অর্থ ও সামরিক সহায়তা দিয়েছে তার একজন কট্টর সমালোচক হচ্ছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবারই যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু কীভাবে তিনি তা করবেন তার বিশদ বিবরণ তিনি দেননি। সম্প্রতি রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলার জন্য ইউক্রেনকে মার্কিন সরবরাহকৃত দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তবে এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে ট্রাম্পের মিত্ররা। এমনকি ইউক্রেন যুদ্ধের উত্তেজনা বিপজ্জনকভাবে বাড়িয়ে দেওয়ার জন্যও তারা বাইডেনকে অভিযুক্ত করেছেন।
এমন অবস্থায় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তার সাক্ষাৎকারে ফক্স নিউজকে বলেন, ইউক্রেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে “ঐক্য” “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ”। তিনি দাবি করেন, ট্রাম্প এই যুদ্ধ শেষ করার জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে প্রভাবিত করতে পারেন, “কারণ তিনি পুতিনের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী”।
তিনি আরও বলেন, পুতিন “রাজি হতে পারেন এবং এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারেন, তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অনেক বেশি নির্ভর করছে। কারণ পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে দুর্বল।”
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সর্বাত্মক হামলা শুরু করে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। এরপর থেকে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে প্রায় ১২ হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আড়াই বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া— চারটি প্রদেশের আংশিক দখল নিয়েছে রুশ বাহিনী।
এই চার প্রদেশের রাশিয়ার দখলে যাওয়া অংশের সম্মিলিত আয়তন ইউক্রেনের মোট ভূখণ্ডের এক-পঞ্চমাংশ। এছাড়া গত শুক্রবার রাশিয়ান বাহিনী পূর্বাঞ্চলের রণাঙ্গনেও অগ্রগতি অর্জন করেছে।