সাকিবুর রহমান
প্রযুক্তিগত উন্নতির কল্যাণে মুঠোফোন ও ইন্টারনেট এখন মানুষের হাতে হাতে। জীবনযাপনে এর সমূহ ইতিবাচক প্রভাব থাকলেও সাইবার অপরাধের মাত্রা বেড়েই চলছে। বিশেষ করে গুজব ও ভুয়া তথ্য ছড়ানোর বড় একটি স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে সাইবার জগৎ।
গুজব হলো কোনো ঘটনা সম্পর্কে লোকমুখে প্রচারিত সত্যতা যাচাই বিহীন কিছু কথা বা ব্যাখ্যা। গুজব নানা প্রকারের হতে পারে। অতীত ঘটনা নিয়ে প্রচারিত গুজবকে ভূতাপেক্ষ গুজব বলা হয়। ভবিষ্যৎ ঘটনা নিয়ে প্রচারিত গুজবকে ভবিষ্যাপেক্ষ গুজব বলা হয়। সহজ কথায় গুজব হচ্ছে, আসল সত্য কে লুকিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা।
মূলত সঠিক তথ্যের অভাবে গুজব ছড়ায়। একটি ঘটনা যখন ঘটে আর সেই ঘটনা যদি গুরুত্বপূর্ণ না হয়ে থাকে তাহলে গুজবের মাধ্যমে সেই ঘটনায় কিছু বাড়তি চটকদার রসদ ছড়িয়ে তা প্রচার করা হয়। গুজব এভাবেই ছড়িয়ে পড়ে।
উদাহরণস্বরূপ, গত কিছুদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়া খুবই উত্তপ্ত ‘ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে নারী আম্পায়ার ম্যাচ পরিচালনা করাতে খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে কিছু ক্রিকেটার (মুশফিক,রিয়াদ)।’ এমন সংবাদের ভিত্তি যে নেই তা নয় তবে সেটা যেদিকে মোড় নিচ্ছে, তা একেবারেই ছাড়িয়ে যাচ্ছে আসল সংবাদের মূল বিষয়বস্তুকেও।
তাহলে এই গুজব কিভাবে ছড়ালো নারী আম্পায়ার থাকাতে খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন কিছু ক্রিকেটার? এর দায় এড়াতে পারেনা দেশের শীর্ষস্থানীয় মিডিয়াগুলো যারা সংবাদের ‘ফ্যাক্ট চেক’ না করেই বিভিন্ন চটকদার শিরোনামে ভিউকার্ড প্রকাশ করছে। সাধারণ মানুষ এখানে কেবল ‘গিনিপিগ’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভিউ আর ভাইরালের নেশায় গুজব ছড়ানোর নতুন উপায় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে এসব মিডিয়াগুলো।
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া তথা ইন্টারনেট গুজব ছড়িয়ে পড়ার প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সাইবার নিরাপত্তা গবেষক রাইয়ান মালিক বলেন, ইন্টারনেটে পাওয়া যেকোনো তথ্য যেমন বিশ্বাস করা যাবে না, তেমনি যাচাই-বাছাই ছাড়া এগুলো শেয়ার করাও যাবে না। গুজব প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য মানুষের সচেতনতা ও সতর্কতা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু তথ্য যাচাই-বাছাই করার দায়িত্ব আসলে কার, সাধারণ মানুষের নাকি সংবাদ মাধ্যমগুলোর?
এমন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একইসাথে গুজব সৃষ্টিকারী ও বিভ্রান্তিকর হেডলাইনে একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সাংবাদিকতা পেশা তেমনই দেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বহির্বিশ্বে। মানুষের আস্থার জায়গা নষ্ট হচ্ছে সংবাদমাধ্যমগুলোর উপর থেকে। যা এক অর্থে সংবাদের ভিউ বাড়ালেও দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিই ডেকে আনছে। এই ধরণের গুজবের ফলে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা কমছে সাংবাদিকতার মতো মহান পেশার।


দেশে আম্পায়ার বিতর্ক নিয়ে রিপোর্টের পর ভারতের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে নিউজগুলো প্রকাশ করা হয়
হ্যাঁ, সাধারন মানুষেরও দায়িত্ব থাকে তবে তারা যখন দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো থেকে কোনো তথ্য পায় তখন আর কোথায় যাচাই-বাছাই করবে? তবুও গুজব কিনা সেটা বোঝার কিছু উপায় আছে। নির্ভরযোগ্য উৎস বা মাধ্যম ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত যেকোনো তথ্যে বিশ্বাস করা যাবে না। কোনো সংবাদ দেখার পর সেটি জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে আরো যাচাই করে দেখা যেতে পারে। তথ্য যাচাইয়ের (ফ্যাক্টচেক) সাইট থেকে তথ্য যাচাই করে নেওয়া। গুজব কখনো কখনো ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত অপরাধ দেখি, যা শুধুমাত্র গুজবের উপর ভিত্তি করে রটনার ফলে ঘটে। এটি মারাত্বক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। কেবল সতর্কতা ও সচেতনতাই নয় বরং কঠোর আইন দরকার গুজব রুখতে।
লেখক একজন সংবাদকর্মী ও নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেজ এন্ড টেকনোলজি খুলনার সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যায়নরত একজন শিক্ষার্থী