হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাসের মত একটি স্পর্শকাতর রোগের টেস্ট রিপোর্ট পজেটিভ দিয়ে কাণ্ডজ্ঞাহীন আচরণ করেছে যশোর ইবনে সিনা হসপিটাল অ্যান্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার। রক্ত পরীক্ষার পর হেপাটাইটিস পজিটিভ রিপোর্ট দিয়ে এক শিশু রোগীর চিকিৎসা দিয়ে তাকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে, অন্য দুটি হাসপাতালে একই শিশুর রক্ত পরীক্ষায় হেপাটাইটিস বির ‘নেগেটিভ’ রিপোর্ট আসে। এরপর নতুন পরীক্ষা ছাড়াই ‘নেগেটিভ’ লিখে নতুন একটি রিপোর্ট সরবরাহ করে ইবনে সিনা। একই হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা একই রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট কিভাবে পজেটিভ ও নেগেটিভ দুটোই হতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জানা যায়, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে জ্বর ও খাবারের অরুচি নিয়ে ১১ মে ভর্তি হয় ধর্মতলা এলাকার বাবুল আক্তারের মেয়ে তাসনিয়া আক্তার (১২)। চিকিৎসকরা তার রোগ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা দেয়। যার মধ্যে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসও ছিল। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসসহ ৮ ধরনের পরীক্ষার জন্য যান ইবনে সিনা হাসপাতালে। ১৪ মে ১১টায় রক্ত সংগ্রহ করে ২টা ১২ মিনিটে রিপোর্ট সরবরাহ করে। সেখানে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস পজেটিভ উল্লেখ করা হয়। এ রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রেডএ্যালার্ট জারি করে। ১২ বছরের শিশুকে সবার থেকে আলাদা করে দেন। কেননা রিপোর্ট অনুযায়ী তার যে রোগ হয়েছে, সেটি মুখের লালার মাধ্যমে ছড়ায়। ডাক্তাররা হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের চিকিৎসাও দিতে থাকেন। অ্যান্টিবায়োটিকসহ বেশকিছু ওষুধ সেবন করানো হয়। এতেই শিশুটির শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হয়। তখন চিকিৎসকরা আবারও টেস্ট করতে বলেন। অভিভাবকরা যশোরের দুটি বড় ডায়াগনস্টিক থেকে পরীক্ষা করান। দুটিতেই রিপোর্ট আসে নেভেটিভ। স্বস্তি পায় চিকিৎসক ও রোগীর অভিভাবকরা। সবার থেকে আলাদা থাকা ও অ্যান্টিবায়োটিকসহ বেশকিছু ওষুধ সেবনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায় শিশুটি। শিশুর অভিভাবকরা ওই দুই ডায়াগনস্টিকের রিপোর্ট নিয়ে দেখান ইবনে সিনা কর্তৃপক্ষের কাছে। তারা কোনো পরীক্ষা না করেই ১৬ মে সন্ধ্যায় নতুন একটি রিপোর্ট সরবরাহ করেন। যাতে ওই দুই হাসপাতালের রিপোর্ট কপি করে লেখা হয় নেগেটিভ।
শিশুর বাবা বাবুল আক্তার অভিযোগ করে বলেন, রিপোর্ট অনুযায়ী চিকিৎসক শিশুটির চিকিৎসা ব্যবস্থা শুরু করেন। শিশুকে ওয়ার্ডের মধ্যে আলাদা রাখা হয়। স্বজনদের কাছে যেতে বাধা দেয়া হয়। এমনকি সেবিকারা শিশুর কাছে যেয়ে ওষুধ দেওয়ার সময় হাতের গ্লাভস পরে গেছেন। আমরা সবাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। আমার মেয়ে আরও বেশি কাহিল হয়ে পড়ে।
যশোর মেডিকেল কলেজের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আব্দুস সামাদ জানান, ইবনে সিনার এত বড় ভুল মেনে নেওয়া যায় না। তাদের ভুল রিপোর্টের কারণে একটি শিশুর জীবন যায় যায় অবস্থা।
এ ব্যাপারে ইবনে সিনা হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের উপ-পরিচালক ডাক্তার মোহাম্মাদ আলী বলেন, শিশুটির বাবা অভিযোগ করেছেন। আসলে ওয়ার্ড বয়ের ভুল। তারা ল্যাব থেকে অসমাপ্ত রিপোর্ট সরবরাহ করেছে। ভুল রিপোর্ট সরবরাহের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, তাদের ল্যাবেও একই পরীক্ষার রিপোর্ট হেপাটাইটিস(নেগেটিভ) শনাক্ত হয়। তাই স্বজনদের কাছে ওই রিপোর্ট মঙ্গলবার সরবরাহ করা হয়েছে।
এদিকে, বক্তব্য নেওয়ার জন্য যশোর সিভিল সার্জন বিপ্লব কান্তি বিশ্বাসকে ফোন করা হলে রিসিভ করেননি।