পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পক্ষে স্লোগান দেয়ার প্রতিবাদে সোমবার যশোর আদালত চত্বরে বিক্ষোভ করেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের কয়েকশো নেতাকর্মী। রোববার বিভিন্ন মামলায় আত্মসমর্পনকালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনার পক্ষে স্লোগান দেয়। সোমবার পাল্টা স্লোগান দেয় ছাত্র-জনতা। মুহুর্মুহু স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে আদালত এলাকা। কয়েক ঘণ্টা অবস্থানের পর ছাত্র জনতা স্থান ত্যাগ করে।
আইনজীবীরা জানান, রোববার যশোরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আওয়ামী লীগের ১৬৭ জন নেতাকর্মী বিস্ফোরকসহ বিভিন্ন মামলায় আত্মসমর্পন করে জামিন আবেদন করেন। এসময় তারা আদালতের সিঁড়িতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ করে স্লোগান দেয়। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে স্লোগান দেয়।
বিষয়টি জানতে পেরে গতকাল তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায় দেয় জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতা। তারা এ ঘটনাকে পরিকল্পিত দাবি করে। এরই ধারবাহিকতায় সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় যশোর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা আদালত চত্বরে এসে বিক্ষোভ করেন। এসময় তারা আদালত চত্বরে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিকারী আওয়ামী ফ্যাসিস্টের দোসরদের প্রতিহতের ঘোষণা দেন। বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত টানা আড়াই ঘন্টা আদালতের ভবনের সামনে বিক্ষোভ করে। এসময় পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিতে থাকে ছাত্ররা। পুরো সময়টাজুড়ে আদালত চত্বরে এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে। তবে সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ডিবি পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে ছিলেন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের আহবায়ক রাশেদ খান বলেন, আওয়ামী দোসরা আদালত চত্বর অস্থিতিশীল করতে ফ্যাসিস্ট হাসিনার নাম উল্লেখ করে স্লোগান দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে আদালত চত্বরে ফ্যাসিস্টদের পক্ষে স্লোগান দেয়ার ঘটনা মেনে নেয়া যায়না।তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিগত বছরগুলোতে গায়ের জোরে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি করেছিল। ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সেই আওয়ামী লীগ সরকার বিতাড়িত হয়েছে। কিন্তু তাদের সেই স্বভাবটা এখনো থেকে গেছে। তারা আদালত চত্বরে দলীয় স্লোগান দিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে। তারা মনে করছে আগের মত তারা আদালতকে ব্যবহার করবে। কিন্তু তাদের সেই ভুল ধারণা ভাঙতে আমরা আদালত চত্বরে বিক্ষোভ করছি। আওয়ামী লীগ সরকার ও তার দোসরা বিগত সময়ে যে অপরাধ করেছে তার বিচার হবে। তাদের সকল অপচেষ্টার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে ছাত্ররা রাজপথে আছে এবং থাকবে বলে তিনি জানান।
এদিকে বিক্ষোভ চলাকালে যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির নব-নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর ছাত্রদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন। এসময় তিনি বলেন, রোববার আওয়ামী ফ্যাসিস্টের দেড় শতাধিক নেতাকর্মী ও আইনজীবীরা আদালত চত্বরে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে। তারা বর্তমান সরকারকে পতন করার লক্ষ্যে যশোর থেকে আন্দোলন শুরুর চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমাদের ছাত্র জনতা বসে নেই। আজ তারা প্রতিবাদ, বিক্ষোভ করেছে।
তিনি বলেন, আমরা আইনজীবীরা এদের সাথে ছিলাম, এদের সাথে থাকবো। আদালত চত্বরে কোনো বিশৃঙ্খলা মেনে নেয়া হবেনা। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যথাযথ দায়িত্বপালন করবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।