দেশে প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে অসংখ্য মোবাইল হ্যান্ডসেট আসছে। এতে সরকার বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এসব হ্যান্ডসেট থেকে রাজস্ব আয় নিশ্চিত করতে আবারও এনইআইআর পদ্ধতি চালু করার নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
গত মঙ্গলবার এ-সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।সূত্র জানায়, দেশে বছরে চার কোটি মোবাইল হ্যান্ডসেটের চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে দেশে বর্তমানে ১৭টি কোম্পানি প্রায় আড়াই কোটি মোবাইল ফোন উৎপাদন করে। বাকি দেড় কোটি মোবাইল ফোনের চাহিদা মেটানো হয় আমদানির মাধ্যমে। এর প্রায় ৫০ শতাংশ আসে অবৈধভাবে। এসব মোবাইল ফোন বিক্রির বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তাই এসব মোবাইল ফোন থেকে সরকার রাজস্ব পাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে দেশের মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমআইওবি) পক্ষ থেকে আবারও ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিফাই রেজিস্টার (এনইআইআর) পদ্ধতি চালু করার অনুরোধ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর এ নির্দেশ দিয়েছে।
সম্প্রতি এনবিআরকে দেওয়া চিঠিতে এমআইওবি বলেছে, আমদানি কমাতে ২০১৮ সাল থেকে স্থানীয়ভাবে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন সংযোজনের কারখানা স্থাপন করা হচ্ছে। গত প্রায় ৮ বছরে স্থাপিত ১৭টি কারখানায় বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। কারখানায় শ্রমিকের সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি, যার মধ্যে নারী শ্রমিক প্রায় ৩০ শতাংশ।
এসব প্রতিষ্ঠান দেশের মোবাইল সেটের চাহিদার শতভাগ পূরণে সক্ষম। কিন্তু অবৈধভাবে আমদানি হওয়ায় উৎপাদনকারীদের বিনিয়োগ ও বাজার ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। কারণ উৎপাদনে নিয়ম-নীতি থাকলেও আমদানিতে তা নেই। আমদানি করা দেড় কোটি হ্যান্ডসেটের মধ্যে বেশির ভাগই আসে চোরাইপথে। এতে সরকার একদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে অবৈধ হ্যান্ডসেটের কারণে দেশ নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।
ওই চিঠিতে উৎপাদনকারীরা বলেছেন, দেশের মোবাইল হ্যান্ডসেটের বাজার প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার। আমদানি করা হ্যান্ডসেট থেকে সরকার সঠিকভাবে রাজস্ব পাচ্ছে না। তাই রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করা, এই খাতে বিনিয়োগ আকর্ষণ ও জাতীয় নিরাপত্তা অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে এনইআইআর সিস্টেম চালু করা প্রয়োজন। দেশে মোবাইল ফোন অপারেটরের নেটওয়ার্কে সচল রয়েছে ১৯ লাখ ৭৬ হাজার আইফোন, যার মধ্যে ১৯ লাখ ৫৫ হাজারই অবৈধ। বর্তমানে অবৈধভাবে আমদানি করা মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রির বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় সরকার প্রতিবছর প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।
এমআইওবি বলেছে, দেশে মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারী শিল্পের সম্ভাবনা থাকলেও এই শিল্প শুরু থেকেই নানা সমস্যার সম্মুখীন, যা সমাধান করা জরুরি। দেশের মোবাইলের গ্রে বা চোরাই মার্কেটের আকার প্রায় ৪০ শতাংশ। হ্যান্ডসেট কারখানা গড়ে ওঠায় দেশে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি (ব্যাটারি, চার্জার, এক্সেসরিজ ইত্যাদি) গড়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া মোবাইলসেট রপ্তানির মাধ্যমে দেশকে প্রযুক্তি রপ্তানিকারকে পরিণত করার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।