নির্মাণকাজের ধীরগতিতে জনমনে অসন্তোষ
খুলনা নগরের গল্লামারী এলাকায় ময়ূর নদের ওপর চার লেনবিশিষ্ট দুটি ষ্টিল আর্চ সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। গত মার্চ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ১৯ শতাংশ।
গল্লামারী সেতু খুলনা নগরে প্রবেশের অন্যতম একটি দ্বার। নির্মাণকাজের ধীরগতির কারণে সব সময় সেখানে অসহনীয় যানজট লেগেই আছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন নগরবাসী। সিটি করপোরেশন, ট্রাফিক বিভাগ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েও ওই যানজট নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। যানজটের কারণে অনেকেই ওই এলাকাটি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন।
খুলনার বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও সাতক্ষীরা, যশোর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ ও যানবাহন ওই এলাকা দিয়ে চলাচল করে। পাকিস্থান আমলে গল্লামারীর ওই এলাকায় ময়ূর নদের ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। সেটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় কয়েক বছর আগে পাশেই আরেকটি সেতু নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। কিন্তু সেটি নিচু করে তৈরি করায় নদী দিয়ে নৌকা চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর নগরবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে সেখানে দুই লেন করে দুটি চার লেনের সেতু নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয় সওজ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভবিষ্যতে ময়ূর নদ দিয়ে যান চলাচলের ব্যবস্থা রাখতেই ১৫ ফুট উচ্চতায় এ নতুন সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। নদের মধ্যে কোনো পিলার হবে না। রাজধানীর হাতিরঝিলের মতো ঝুলন্ত সেতু হবে এটি। এর দৈর্ঘ্য হবে ৭৪ মিটার ও প্রস্থ ২২ মিটার। পানি থেকে সেতুর উচ্চতা থাকবে কমপক্ষে সাত মিটার।
খুলনা সওজ সূত্রে জানা গেছে সংযোগ সড়কসহ দুটি সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড (এনডিই) প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ১০ দিন পরেই পুরোনো সেতুটি ভাঙার কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে একটা সেতুর দুই পাশের ভিত তৈরি করা হয়ে গেছে। এখন বাকি রয়েছে স্টিলের অবকাঠামোর কাজ। সেটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তার নিজস্ব ওয়ার্কশপে করছে। প্রথম সেতুর কাজ শেষ হলে দ্বিতীয় সেতুর কাজ শুরু হবে।
সম্প্রতি ওই এলাকাটি সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে সেখানে কোনো কাজ চলছে না। একটা সেতুর জন্য নদীর দুই পাড়ে পিলার নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে বেশ আগেই। লোহার রডগুলো বেরিয়ে আছে পিলার থেকে। অন্য সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। সেতুর মাঝখানে বাঁশ দিয়ে যাওয়া ও আসার লেন দুটি আলাদা করা হয়েছে। ওই সেতুর প্রশস্ততার তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা বেশি থাকায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ভারি কোনো যানবাহন গেলেই যানজটের স্থায়ীত্ব দীর্ঘ হচ্ছে। দুই পাশের সড়কও ভাঙাচোরা। সেতুর দুই পাড়ে রাস্তার পাশেই বসেছে ভ্রাম্যমাণ বাজার। যত্রতত্র পার্কিং করে রাখা হচ্ছে ইজিবাইক। এসব নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশ।
আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি যানজট হয় সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে ও বিকেল থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত। সেখানে কথা হয় ইজিবাইক চালক মো. মিলনের সঙ্গে। তিনি বলেন, খুব বেশি কাজ না থাকলে যানজটের কারণে তারা সাধারণত গল্লামারী এলাকায় আসেন না। খুলনা শহরের কোথাও খুব বেশি যানজট হয় না, শুধু গল্লামারী এলাকায় এলেই যানজটে নাকাল হতে হয়। এ কারণে তারা পথটি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের (এনডিই) প্রকল্প ব্যবস্থাপক অপূর্ব কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘কাজ বন্ধ রয়েছে ব্যাপারটি এমন নয়। পিলার তৈরির কাজ শেষ, এখন নিজস্ব ওয়ার্কশপে স্টিলের কাজ করা হচ্ছে। গত অক্টোবরে স্টিলের কাজের নকশার অনুমোদন পাওয়া গেছে। এ কারণে স্টিলের কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। আশা করা যায় আগামী জুন মাসের মধ্যে একটা সেতুর সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। এরপর দ্বিতীয় সেতুর কাজ শুরু হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম গল্লামারীর ওই অংশটি পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়ে সেতু নির্মাণ করতে। এতে দুটি সেতুর কাজ এক সঙ্গে শুরু করা যেত। সময়ও অনেক কম লাগতো। এখন
একটা সেতুর কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আরেকটির কাজ শুরু করা যাবে না। তবে আমাদের সবকিছুই প্রস্তুত আছে, দ্বিতীয় সেতুর কাজ শেষ করতে খুব বেশি সময় লাগবে না।”
গল্লামারী সেতুর নির্মাণ কাজের প্রকল্প পরিচালক ও সওজের খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন বলেন, প্রতিটি সেতুতে প্রায় ৭০ শতাংশ স্টিলের কাজ। বিভিন্ন কারণে কাজ শেষ করতে দেরি হচ্ছে। একটি সেতুর কাজ চলতি বছরের জুনের মধ্যে শেষ হবে। এরপর দ্বিতীয় সেতুর কাজ শুরু হবে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গল্লামারী এলাকাটি খুলনার নগরের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। সেখানে যানজটের অন্যতম কারণ অনিয়ন্ত্রিত ইজিবাইক পার্কিং ও বাজার। এসব নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে যানজট অনেক কমে আসবে।
সূত্র- দৈনিক বাংলা