ঢাকা শহরে ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহন করছে মেট্রোরেল। ঐদিন থেকে দ্রুতগতি ও সৌন্দর্যের প্রতীক মেট্রোরেল একটি আদর্শ বাহন হিসেবে ব্যবহারকারীদের মনে অনেকটা জায়গা করে নিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে মেট্রোরেলে অপরিকল্পিতভাবে বিজ্ঞাপন লাগানোর ফলে এটি সৌন্দর্য হারিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন যাত্রীরা।
সোমবার (১৩ নভেম্বর) সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু ভিডিও এবং ছবি ছড়িয়ে পড়ে মেট্রোরেলের। সেই ছবি এবং ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, একটি প্রতিষ্ঠান মেট্রো ট্রেনের ভেতর বিজ্ঞাপন সাঁটিয়েছে। বিজ্ঞাপনগুলো কখনো দরজায়, কখনো জানালার কাছে, কখনো নির্দেশনার কাছে লাগানো হয়েছে। ট্রেনের যে জায়গাটুকুর মধ্যে ৬ জন মানুষ দাঁড়াতে এবং তিনজন মানুষ বসতে পারবে ততটুকু জায়গার মধ্যে অন্তত দশটি পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। এছাড়া বাকি ট্রেনে তো আছেই। বিষয়টি নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করছেন যাত্রীরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘বিশ্বের সব মেট্রোরেলেই বিজ্ঞাপন থাকে, কিন্তু সব কিছুরই একটা সৌন্দর্য থাকে। এই ছবিটা অনলাইন থেকে পাওয়া, এডিট করা মনে হচ্ছে না। এটা যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ এবং বিজ্ঞাপনদাতা দুইজনেরই রুচিবোধ, ব্র্যান্ডিং, মার্কেটিংয়ের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। মনে হচ্ছে ফার্মগেটে কোনো দেয়ালের ওপর পোস্টার লাগানো হয়েছে। এতো সুন্দর একটা উদ্যোগ, এভাবে নষ্ট করা উচিত না।’
পোস্টে অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন।
মারুফ বিল্লাহ লিখেছেন, ‘জাপানিদের কাছ থেকে মেট্রোরেল বানিয়ে নিলাম কিন্তু ওদের কাছ থেকে কি সৌন্দর্যবোধটুকু শিখলাম না।’
মিঠুন দাস কাব্য লিখেছেন, ‘বিজ্ঞাপন দেবেন ভালো কথা, মেট্রোতে দিবেন আরও চমৎকার আইডিয়া। কিন্তু তাই বলে একই পোস্টার দিয়ে এক ইঞ্চি জায়গা খালি না রেখে, পোস্টারিং করার এই আইডিয়া কিভাবে মাথায় আসলো? নাকি এইটাই নতুন ট্রেন্ড? যেখানে যত জায়গা পাবা, পোস্টার দিয়ে ভরাইয়ে ফেলবা।’
মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ৫ কোটি টাকায় বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপন এজেন্সি মিডিয়া কমের সঙ্গে ডিএমটিসিএলের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।
এ বিষয়ে কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আবদুর রউফ জানিয়েছেন, এটা আমাদের বিজনেস প্লানিংয়ের একটা অংশ। উন্নত বিশ্বেও মেট্রোরেলে বিজ্ঞাপনের প্রচলন আছে। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই আমরা শুরু করেছি। এতে করে মেট্রো রেলের খরচ কমে আসবে বলে আমরা মনে করছি।
মেট্রোরেল আয় বাড়াতে ট্রেনের ভেতর বিজ্ঞাপন লাগানোর অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞাপনগুলো এতটা অপরিকল্পিতভাবে লাগানো হয়েছে যে, ভেতরের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেছে বলে যাত্রীরা মন্তব্য করছেন— এই বিষয়ে জানতে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিককের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে ও ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার সময় পর্যন্ত তিনি সাড়া দেননি। তবে দুপুর ২টার দিকে একবার জানিয়েছিলে, তিনি একটি ভার্চুয়াল মিটিংয়ে আছেন।
এদিকে মেট্রোরেলের সৌন্দর্য নষ্ট করার দায়ে কনকা ফ্রিজ বয়কট করা হোক নামে একটি ইভেন্টও খুলেছে ‘মেট্রোরেল প্যাসেঞ্জার কমিউনিটি-ঢাকা’র মডারেটর ফারহানা তাসনিম।