সব প্রাণী মৃত্যু পথের যাত্রী। মৃত্যুই আমাদের সবার গন্তব্য। মৃত্যুর পর ভালো-মন্দ সব আমলের হিসাব হবে। সবাইকে নিজ নিজ আমলের ফল ভোগ করতে হবে। ছোট বড় সব কর্মের বিনিময় পেয়ে যাবে সেদিন পরিপূর্ণভাবে। তাই সুফলের আশা নিয়ে কল্যাণময় কাজে আত্মনিয়োগ করাই বুদ্ধিমানের পরিচয়। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘বুদ্ধিমান সেই, যে ব্যক্তি নিজের আত্মপর্যালোচনা করে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য আমল করে। আর অক্ষম ওই ব্যক্তি, যে স্বীয় প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং আল্লাহর প্রতি অবাস্তব আশা পোষণ করে।’ (তিরমিজি, হা. ২৬২৭, হাসান)
অপর বর্ণনায় রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তিকে অনুসরণ করে থাকে, তার পরিবার, সম্পদ ও আমল। তার পরিবার ও সম্পদ এ দুটি জিনিস ফিরে আসে। তার সঙ্গে শুধু আমলই থেকে যায়। (সহিহ বুখারি, মুসলিম)। মৃত্যুর পর মানুষ সব ধরনের কর্ম ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। শক্তি-সামর্থ্য, ক্ষমতা সবই হয় তখন নিষ্ক্রিয়। তবে জানার বিষয় হলো, তখনো মানুষের তিন ধরনের সৎকর্মের ফল্গুধারা চালু থাকে। কবর থেকেও মৃত ব্যক্তি তার কৃত সেই আমলের বিনিময় ধারাবাহিকভাবে ভোগ করতে থাকবে। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মানুষ যখন মারা যায় তিনটি কাজ ছাড়া অন্য সব আমলের পথ তার বন্ধ হয়ে যায়। ওই তিনটি আমল হলো, সদকায়ে জারিয়া (চালু থাকার মতো দান) এমন জ্ঞান যা দ্বারা পরবর্তীরা উপকৃত হবে এবং নেক সন্তান যে তার জন্য দোয়া করবে।’ (সহিহ মুসলিম, হা. ৪৩৮০) উল্লিখিত হাদিসে বর্ণিত তিনটি আমলের প্রথমটি হলো, সদকায়ে জারিয়া। সদকা অর্থ দান। আর জারিয়া অর্থ অব্যাহত থাকা। সদকায়ে জারিয়া অর্থ হলো, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এমন কিছু দান করা যার কল্যাণ ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত থাকে। সদকায়ে জারিয়া পরকালের জন্য এক ধরনের সঞ্চয়, যা নিয়মিত সমৃদ্ধ হতে থাকে। তাই এমন সব ধরনের কাজ সদকায়ে জারিয়া হিসেবে গণ্য হবে যা স্থায়ী হয় ও অব্যাহত থাকে। যেমন সব ধরনের ওয়াক্ফ সম্পদ, মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ, জনকল্যাণ বা ধর্মীয় খাতে স্থায়ী কোনো অনুদান, ধর্মীয় শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা, কোনো শিক্ষার্থীকে সহযোগিতা করা, কোরআন হাদিস ও ধর্মীয় কিতাব দান করা। ধর্মীয় বই পুস্তক প্রকাশ করা, জনকল্যাণমূলক কাজ করা, নলকূপ ও পানীয় ব্যবস্থা করা এবং বৃক্ষরোপণ করা ইত্যাদি সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত। যতকাল তা স্থায়ী হবে এবং মানুষ উপকৃত হবে, ওই পর্যন্ত এর সওয়াবের ধারা দাতার নামে অব্যাহত থাকবে। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, এমন জ্ঞান যা থেকে মানুষ পরবর্তীতে উপকৃত হতে পারে। যেমন : যোগ্য ছাত্র গড়ে যাওয়া, লিখিত বা প্রকাশিত গ্রন্থ ইত্যাদি রেখে যাওয়া।
তৃতীয় বিষয়টি হলো, এমন সু-সন্তান রেখে যাওয়া, যে সন্তান মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করবে। যখনই তার সন্তান তার জন্য দোয়া করবে, হজ, ওমরাহ, তিলাওয়াত ও নেক আমল করে তা পৌঁছাবে এর বিনিময়ে মৃত ব্যক্তি ধন্য হবে, উপকৃত হবে, বেহেশতে তার মর্যাদা বৃদ্ধি হবে। (আহমদ)
লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।