সারা বিশ্বে দিন দিন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। ডায়াবেটিস হল এমন একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে শরীর নিজে থেকে ইনসুলিন উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। এটি গ্লুকোজ আকারে রক্তে পাওয়া শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যদিও বর্তমানে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পিছনে দায়ী অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা।
আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন দ্বারা ২০১৭ সালে পরিচালিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, বহু শতাংশ মানুষের কোনও উপসর্গ ছাড়াই ধরা পড়ে সুগারের সমস্যা। যদিও ডায়াবেটিসের একাধিক উপসর্গ রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- ক্লান্তি, দুর্বলতা, ঝাপসা দৃষ্টি, অত্যধিক তেষ্টা, ঘন ঘন প্রস্রাব। এগুলো ছাড়াও এমন কিছু লক্ষণ রয়েছে, যা উপেক্ষা করা উচিত নয়।
চিকিৎসকদের মতে, রক্তে যদি শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় তাহলে মুখের আশেপাশেও তার লক্ষণ দেখা যায়। মূলত ডায়াবেটিস হল এমন একটি রোগ যেটি শরীরের অন্যান্য অঙ্গের উপরও প্রভাব ফেলে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলেই বেশির ভাগ মানুষ কিডনি, স্নায়ু, হার্ট ইত্যাদি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়। কিন্তু মুখের কথা সহজে কেউ মনে করে না। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে মুখেও তার লক্ষণ প্রকাশ পায়। এই ক্ষেত্রে মুখ ও দাঁতের পরীক্ষা করানো আবশ্যিক।
অনেক ক্ষেত্রে মুখে আলসার হলে এর সঙ্গে ডায়াবেটিস থাকলে সহজে ক্ষত সারতে চায় না। এই লক্ষণটিকে উপেক্ষা করা উচিত নয়। অনেক সময় এমনও দেখা যায়- ডায়াবেটিসের কারণে শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে। এর পাশাপাশি দাঁত ও মাড়িতে বার বার সংক্রমণ হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে দাঁতের চিকিৎসকদের কাছে যাওয়ার পাশাপাশি রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করানো উচিত।
ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের মুখে দুর্গন্ধও তৈরি হয়। ডায়াবেটিক কেটোঅ্যাসিডোসিসের ফলে একটি তীব্র কিটোন তৈরি হয় মুখের মধ্যে। যে কারণে তখন নিঃশ্বাস থেকে কিংবা মুখ থেকে বাজে গন্ধ বের হয়। যাদের ব্লাডসুগার ২৫০ বা ৩০০-এর বেশি তাদের নিয়মিত এই পরীক্ষা করানো প্রয়োজন। কিটোন আছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য ডায়াবেটিস রোগীর প্রস্রাবও পরীক্ষা করা হয়। যদি হ্যালিটোসিস পরীক্ষায় দেখা যায় যে, রোগীর মধ্যে কিটোনের পরিমাণ বেশি তাহলে তা রীতিমতো উদ্বেগের কারণ।
ডায়াবেটিস হলে সঙ্গে সঙ্গেই যে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাবে এমন নয়। বরং যখন ধরা পড়ে তখন অনেকটাই দেরি হয়ে যায়। ডায়াবেটিস বাড়লে কিডনি, চোখ, স্নায়ুর উপর চাপ পড়তে শুরু করে। যা আপাতদৃষ্টিতে বোঝা যায় না। অনেক সময় ক্ষত হলেও তা সারতে সময় লাগে। তাই সময়মতো রোগ নির্ণয় ভীষণ জরুরি। সেই সঙ্গে বছরে একবার ব্লাডসুগার পরীক্ষা করানো আবশ্যক। এছাড়াও লাইফস্টাইল, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনলে আগেভাগেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় রক্তে শর্করার মাত্রা।
পি এস/এন আই