বর্তমান আইনে জনসাধারণের মাস্ক পরা বাধ্য করতে কঠোর হতে পারে না পুলিশ। এজন্য পুলিশকে নির্বাহী ক্ষমতা দিয়ে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।যাতে পুলিশ জনগণের ওপর প্রয়োজনে ‘লাঠিপেটাও’ করতে পারে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোগ হিসেবে সরকার এই কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সরকারের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা।
এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, যারা মাস্ক পরছে তারা সেভ থাকছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে না যে করোনা সহজে চলে যাবে। আমরা মাস্ক পরা শতভাগ নিশ্চিত করতে চাই। এজন্য আইন সংশোধন করে জরিমানাসহ আইনে আরও কঠোরতা রাখা যায় কিনা সেটা ভাবছি।
স্বাস্থ্যবিধি না মানা এবং মাস্ক না পরায় বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করছেন। তবে সীমিত সংখ্যক মোবাইল কোর্ট দিয়ে এই কার্যক্রম বিস্তার বা জোরদার সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য পুলিশকে কঠোর হতে উদ্যোগ নেওয়া হয়।
গত ২৬ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে লকডাউন বাড়ানোর সিদ্ধান্তের সময় মাস্ক পরার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পুলিশকে যেকোনোভাবে নির্বাহী ক্ষমতাসহ পুলিশ যাতে পেটাতে পারে সে বিষয়টি আলোচনায় আসে।
সরকারের একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার না করলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বারবার ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে, অনেকেই এ নিদের্শনা অমান্য করছেন। এক্ষেত্রে বাইরে চলাফেরার সময় মাস্ক ব্যবহার না করলে সরকার কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু আইনে বিধান না থাকায় পুলিশ নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারছে না।
ওই কর্মকর্তা বলেন, মাস্ক না পরলে শাস্তি কী হবে- এমন আলোচনার সময় একজন কর্মকর্তা ‘বেতের বাড়ির’ প্রস্তাব করেন। কিন্তু প্রচলিত আইনে পুলিশের বেতের বাড়ি দেওয়ার সুযোগ নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে আরেকজন আলোচক প্রয়োজনে আইনি সুযোগ তৈরির প্রস্তাব করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ‘বেতের বাড়ির’ বিষয়টি কীভাবে আইনি পরিকাঠামোতে আনা হবে, তা ভাবা হচ্ছে।
তিনি বলেন, জরুরি জনস্বার্থ বিষয়ক প্রয়োজনে সরকার বেতের বাড়ি দেওয়ার প্রভিশন আইনে যুক্ত করতে পারে। সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ আইন বা অন্য কোনো আইনে তা বৈধতা দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, পুলিশের কাছে নির্বাহী ক্ষমতা না দিলে তারা প্রয়োগ করতে পারবে না। এজন্য আইন সংশোধন করে নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া হবে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ এর মধ্যে এই প্রভিশনটা রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য হলো জনগণকে নিরাপদ রাখা।
লাঠিপেটা বা বেত্রাঘাতের নিয়ম ব্রিটিশ আমলে থাকলেও পরে তা বাতিল করা হয় বলে কর্মকর্তা জানিয়েছেন। বর্তমানে দেশে বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইনি শাস্তির বড় বিষয়গুলো রয়েছে পেনাল কোডে। কিন্তু পেনাল কোডে বেত্রাঘাত বা লাঠিপেটার বিধান নেই। তবে ‘হুইপিং (চাবুক) অ্যাক্ট, ১৯০৯ নামের একটি আইন চালু আছে। মাস্ক পরার ক্ষেত্রে সেটা ব্যবহার করা যায় কিনা- সেটাও মাথা রাখা হচ্ছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।