সাকিবুর রহমান
গত শনিবার ইসরায়েল ভূখণ্ডে কয়েকশো ড্রোন ও ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে ইরান। বড় কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া না গেলেও ইসরায়েল কি জবাব দেয় তার উপর নির্ভর করছে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘাতের তীব্রতা ও এর অবসানের সময়সীমা।
ইতোমধ্যে জাতিসংঘে তেহরান কূটনীতিক বিবৃতি দিয়ে এই হামলার আপাতত সমাপ্তি ঘোষণা করতে চাইছে। কিন্তু তেল আবিব এখনো পর্যন্ত বড় কোনো পদক্ষেপ না নিলেও সম্ভাব্য পদক্ষেপ কি হতে পারে তার জল্পনা বাড়ছে ক্রমশই।
ঐতিহাসিকভাবে দু-দেশের সম্পর্ক কখনোই স্বাভাবিক ছিলো না। তবে গত বছরের ৭ অক্টোবরের পর থেকে তা তলানিতে এসে ঠেকেছে।
গত কয়েক মাসে সিরিয়া ও লেবাননে একেরপর এক হামলায় ইরানের গুরুত্বপূর্ণ সব সামরিক ব্যক্তিত্ব নিহত হয়েছে যার দায়ভার যুক্তরাষ্ট্র নিলেও তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হয়ে ছিলো ইসরায়েল।
জবাবে দীর্ঘদিন বিবৃতির উপর দিয়ে গেলেও এপ্রিলের শুরুতে দামেস্কে ইরানি দূতাবাসে হামলার জবাব এবার সরাসরি ড্রোন হামলা দিয়ে দিলো তেহরান।
তবে ইরানের হামলার পর দাবার গুটি এখন ইসরায়েলের কোর্টে। হামাসের আক্রমণের পর আবার আরেকটি অপ্রত্যাশিত এ হামলায় নেতানিয়াহু সরকার চরম বিব্রত ও অস্বস্তিতে পড়েছে।
তেল আবিবের দাবি অনুযায়ী ইরানের এ হামলায় তাদের নিজস্ব সীমান্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম ৯৯ শতাংশ রকেট রুখে দিয়েছে।
ওতে সাময়িক ভাবে সাধারণ জনগণ আসস্থ হলেও তাদের অস্বস্তি কাটছে না।
ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে ইরানকে “নজিরবিহীন মাত্রায়” জবাব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ভালো করেই জানেন দীর্ঘমেয়াদি সংঘাত একবার শুরু হলে তা ছড়িয়ে পড়বে পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে তাতে বাঁধা পড়তে পারে সম্প্রতি আলোচিত “রেড হেইফার” প্রজেক্টে।
এই মুহুর্তে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র কোনো বড় ধরনের যুদ্ধ চায় না একইসাথে ওয়াশিংটন নেতানিয়াহুর রণকৌশল নিয়েও খানিকটা উদ্বিগ্ন।
ইসরায়েল বিগত কিছু বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের মিত্রতা বাড়ালেও তারা ভালো করেই জানে ইরানে বড় ধরনের হামলা চালালে সেসব মিত্রদের অনেকের পক্ষে নিশ্চুপ থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে অন্তত যে-সব দেশের সাথে ইরানের ঘনিষ্ঠতা আছে।
আইআরজিসি ‘একটি নতুন সমীকরণ রচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া’র ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাঁধা ও আগাম গোয়েন্দা বার্তা এড়িয়েও ইরান হামলা করেই ক্ষান্ত হয়েছে।
এতকিছুর মধ্যে বোধহয় আড়ালে চলে যাচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। পুরো বিশ্বজুড়ে তাদের জন্য যে সক্রিয় সমর্থন গড়ে উঠছিলো তা যেনো এই মুহূর্তে কোনঠাসা ইরানের হামলার পর। একইসাথে ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তির সমঝোতাও এই মুহুর্তে নাগালের বাইরে চলে গেলো।