অস্কারের পুরস্কারের মঞ্চে স্ত্রীকে নিয়ে চটুল রসিকতার ‘শাস্তি’ হিসেবে সোজাসুজি মঞ্চে উঠে গিয়ে সঞ্চালক কমেডিয়ান ক্রিস রককে সপাটে চড় মারেন উইল স্মিথ! এতে স্তব্ধ হয়ে যায় কোটি কোটি দর্শক। হঠাৎ কেন এত চটে গেলেন ‘কিং রিচার্ড’-এর জন্য এ বছরের সেরা অভিনেতার অস্কারজয়ী, তা বুঝতে পারছিলেন না অনেকেই!
অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে সঞ্চালক ক্রিস নানা ধরনের রসিকতা করছিলেন। তার মধ্যেই একটি রসিকতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন স্মিথের স্ত্রী জাডা পিঙ্কেট। সঞ্চালনা করতে করতেই ক্রিস বলেন, “আমি জি আই জেন-এর সিক্যুয়েলের অপেক্ষায় রয়েছি।” দর্শকাসনে একেবারে সামনের সারিতে সবুজ গাউন পরিহিতা জাডা ওই মন্তব্য শুনে দৃশ্যতই অসন্তুষ্ট হন। তার মুখভঙ্গিতে তা স্পষ্ট বোঝাও যাচ্ছিল। এরপরই নিজের আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ান স্মিথ। লম্বা লম্বা পায়ে এগিয়ে যান মঞ্চের দিকে। মঞ্চে উঠে কোনও বাক্যব্যয় না-করে ডানহাতে সপাটে ক্রিসের বাঁ-গালে একটি চড় মারেন! আচমকা চড়ের অভিঘাতে ক্রিস খানিকটা হকচকিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বিষয়টি সামলে নেন।নিজের আসনে ফিরে আবার চিৎকার করে স্মিথ বলতে থাকেন, “তোমার (নোংরা) কথা থেকে আমার স্ত্রীকে দূরে রাখ!’’ বস্তুত, ক্রিসের উদ্দেশ্যে ছাপার অযোগ্য চার অক্ষরের শব্দও ব্যবহার করেন ক্রুদ্ধ স্মিথ।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালেও সঞ্চালনার সময়ে পিঙ্কেটকে নিয়ে রসিকতা করেছিলেন ক্রিস। এবারও তিনি বোঝাতে যান, রসিকতাই করছিলেন। তার চেয়ে বেশি কিছু নয়। কিন্তু স্মিথকে থামানো যায়নি। ক্রিসের ওই বক্তব্যের পরেও চিৎকার করে তাকে একই কথা বলেন স্মিথ।
১৯৯৭ সালের ছবি ‘জি আই জেন’-এ নায়িকার চরিত্রে অভিনেত্রীর মাথায় চুল কম থাকা নিয়ে বিস্তর চর্চা হয়েছিল। স্মিথের স্ত্রী জাডার মাথাতেও চুল কম। অনেকটা মস্তক মুন্ডনের পর সদ্য চুল গজালে যেমন হয়, তেমনই। সে কারণেই সম্ভবত রসিকতা করে জাডাকে ‘জি আই জেন ২’-এর নায়িকার ভূমিকায় দেখার বাসনার ইঙ্গিত করেন ক্রিস।
উল্লেখ্য, ‘অ্যালোপেসিয়া’ নামে একটি রোগে আক্রান্ত উইল স্মিথের স্ত্রী জাডা। এই রোগের শিকার হলে মাথার চুল পড়ে যায়। জাডার ক্ষেত্রেও তেমনই হয়ে থাকবে। কিন্তু স্ত্রীর অসুস্থতা নিয়ে অস্কারের মঞ্চে সঞ্চালক ক্রিস রসিকতা করাতেই মেজাজ হারান স্মিথ।
চুল পড়া এবং অ্যালোপেসিয়া
এই অ্যালোপেসিয়া রোগটি আসলে কী? জানলে অবাক হবেন, এটি কোনও বিরল রোগ নয়। অনেকেই আক্রান্ত হন এই রোগে। যে কোনও মানুষেরই প্রত্যেক দিন গড়ে ১০০টি চুল পড়ে যেতে পারে। সেটি স্বাভাবিক নিয়ম। মাথার তালু থেকে যত চুল পড়ে, তত চুল ফের গজিয়েও যায়। কিন্তু চুল পড়া আর নতুন চুল গজানোর অনুপাত যখন সমান হয় না, তখনই চুল পাতলা হওয়া শুরু হয়। অত্যধিক চুল পড়ার নানা রকম কারণ থাকতে পারে। শারীরিক অসুস্থতা, ঘুম কম, অস্বাস্থ্যকর খাওয়া-দাওয়া, পানি কম খাওয়া কিংবা অতিরিক্ত মানসিক চাপে এমন হতেই পারে। সঠিক কারণ জানতে পারলে এবং সেই অনুযায়ী জীবনযাপনে বদল আনতে পারলে কিছু সময় পর স্বাভাবিক নিয়মেই চুল পড়া কমে যায়। যেকোনও রকমের শারীরিক অসুস্থতা কেটে গেলেও চুল পড়া কমে যেতে পারে। কিন্তু তা না হলে সমস্যা তৈরি হয়।
অ্যালোপেসিয়া রোগ কীভাবে আলাদা
যখন শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা চুলের ফলিকলগুলোকে আক্রমণ করে, তাকে বলা হয় অ্যালোপেসিয়া অ্যারেটা। মাথার তালু এবং মুখেই এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে। মাথার তালুতে গোল গোল চাকতির মতো চুল পড়ে টাক হয়ে যায়। কিন্তু এই রোগে অন্য কোনও রকম সমস্যা বা উপসর্গ তেমন নেই। যারা অ্যালোপেসিয়ায় আক্রান্ত, তারা অন্য সবার মতো সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন।
কেন হয়
শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা চুলের ফলিকলগুলো আক্রমণ করলে এমন হতে পারে। এর পিছনে আসল কারণ কী, তা গবেষণায় খুব বেশি জানা যায়নি। তবে এটি বংশগত রোগ হতে পারে কিংবা পরিবেশ বা পারিপার্শ্বিক কারণেও হতে পারে। সূত্র: ফার্স্টপোস্ট, ইউএসম্যাগাজিন, বিবিসি
পি এস/এন আই