ভারত, নেপাল ও ভুটানে উৎপাদিত সুতা স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি বন্ধ করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক প্রজ্ঞাপনে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুবিধা বাতিল করেছে।
এ-সংক্রান্ত পুরোনো প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে গতকাল মঙ্গলবার নতুন প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। তবে সমুদ্রবন্দর কিংবা বিমানবন্দর দিয়ে সুতা আমদানিতে কোনো বাধা নেই।
বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) কয়েক বছর ধরে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের অভিযোগ, স্থলবন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় সুতা আসছে দেশে। উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে কম দামে বাংলাদেশে সুতা পাঠানোর কারণে দেশের বস্ত্রকলগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। স্থলবন্দর ব্যবহার করে সুতা আমদানি বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে দেশের টেক্সটাইল শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এতে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। ফলে বিদেশি সুতার ওপর আমদানি-নির্ভরশীলতা বেড়ে যাবে, আমদানি ব্যয় বাড়বে। একই সঙ্গে বাড়বে বেকারত্ব।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এনবিআরকে নির্দেশ দেয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পেয়ে এনবিআর এ সিদ্ধান্ত নিল। দীর্ঘদিনের দাবি সত্ত্বেও এমন এক সময় এ সিদ্ধান্ত এলো, যখন ভারত তার বন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি নিষিদ্ধের বিষয়ে সরকারের এ সিদ্ধান্তে বিটিএমএ নেতারা খুশি। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক উদ্যোক্তারা এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। রপ্তানি বাণিজ্যে ব্যয় এবং লিডটাইম এতে বেড়ে যাবে বলে মনে করেন তারা।
জানতে চাইলে বিটিএমএর পরিচালক খোরশেদ আলম সমকালকে বলেন, ভারতের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলে উৎপাদিত সুতা কলকাতায় গুদামজাত করা হয়। এরপর সেখান থেকে সুতা বাংলাদেশে পাঠানো হয়। এসব সুতা তুলনামূলক কম দামে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। দেশি সুতার পরিবর্তে স্থলবন্দর দিয়ে আসা সুতা বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কারণে দেশের বস্ত্র শিল্পকারখানাগুলো বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছে। রপ্তানি পণ্যের জন্য উৎপাদিত সুতা ও বস্ত্র এবং স্থানীয় বাজারের জন্য উৎপাদিত সুতা ও বস্ত্র দু’দিক থেকে ক্ষতির মুখে আছেন তারা।
প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা-কাপড় বেশি আমদানি করে থাকে তৈরি পোশাকের নিট ক্যাটেগরির পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএ। সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গতকাল সমকালকে বলেন, এটি একটি অন্যায় সিদ্ধান্ত। সরকারের এ সিদ্ধান্তের কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে, বিশেষ করে ছোট কারখানা বেশি বিপদে পড়বে। কারণ, এতদিন রপ্তানি আদেশ পেলে ১০-২০ টন সুতা দু’দিনের মধ্যে ভারত থেকে আমদানি করতে পারতেন। এখন তারা বিপদে পড়বেন।
তিনি আরও বলেন, এ রকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তৈরি পোশাক খাতের দুই সংগঠন বিজিএমইএ কিংবা বিকেএমইএর সঙ্গে আলোচনা করেনি। একতরফা বিটিএমএর দাবি আমলে নিয়েই এ রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যদি স্থলবন্দর দিয়ে কাস্টমসকে ফাঁকি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ থাকে, তাহলে সমুদ্রবন্দর দিয়ে আসা সুতা ছাড় করতেও একই সুযোগ পাবে দুষ্কৃতকারীরা। কম সময়ে আমদানির সুযোগ বন্ধ না করে স্থলবন্দরগুলোর শুল্কায়ন পদ্ধতিতে অনিয়ম থাকলে সেটি শোধরানো ছিল সরকারের কাজ। সেটি না করে এ রকম ভুল সিদ্ধান্তে রপ্তানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।