ভারত ও চীনের সম্পর্ক নিয়ে নানা ধরনের কূটনৈতিক জটিলতা রয়েছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই একদিকে যেমন ‘ড্রাগন-হাতির সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্ব’ চান, তেমনি একই সময়ে চীন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ২৪৯ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা বাজেট ঘোষণা করেছে।
চীনের বার্তা
চীন সম্প্রতি তাদের সামরিক বাজেট ৭.২ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। যা শুধু প্রতিবেশী ভারতের জন্যই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও একটি স্পষ্ট বার্তা। যুক্তরাষ্ট্র যখন তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে, তখন চীন প্রতিক্রিয়াস্বরূপ জানিয়ে দিয়েছে, ‘কয়েকটি মার্কিন অস্ত্র তাইওয়ানের স্বাধীনতার অনিবার্য পরাজয় ঠেকাতে পারবে না’।
অন্যদিকে চীন ভারতকে বড় কোনো নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখে না বললেও, বাস্তবে তারা ভারতের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে। তারা ইউনান প্রদেশে নতুন করে বড় পরিসরের সামরিক রাডার (LPAR) বসিয়েছে, যা ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাগুলো পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম।
ভারতের জন্য সতর্কবার্তা
এদিকে ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট ৬.৮১ লাখ কোটি রুপি, যা চীনের বাজেটের তুলনায় অনেক কম। সীমান্ত পরিকাঠামোর দিক থেকেও ভারত চীনের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। এর মানে, ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি।
চীন বলছে, সীমান্ত বিরোধগুলো ভারত-চীন সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলা উচিত নয়। তবে বাস্তবতা হলো- ২০২০ সালে লাদাখের ডেপসাং ও দেমচক এলাকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ দুই দেশের সম্পর্কে গভীর সংকট তৈরি করেছে।
ভারত কী করতে পারে?
ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতি হয়তো এই সংকটের সমাধানে সহায়ক হতে পারে। ভারত যদি চীনের কাছ থেকে পণ্য আমদানির পরিবর্তে চীনা মূলধন আমদানির দিকে ঝোঁকে, তাহলে কিছুটা কৌশলগত ভারসাম্য আনা সম্ভব।
এছাড়াও ভারতের সামনে সুযোগ রয়েছে, চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার। এ বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর বক্তব্য, ‘চীন ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত’।ভারত চীনের এই অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে সম্পর্কের কূটনৈতিক দিকটি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে।
চূড়ান্ত ভাবনা
মোদ্দাকথা হলো- ভারত ও চীনের সম্পর্ক কখনোই সহজ ছিল না, ভবিষ্যতেও সহজ হবে না। তবে সতর্কতা, কৌশলগত ভারসাম্য এবং বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বন করে ভারত চীনকে নিজের স্বার্থে কাজ করতে বাধ্য করতে পারে।
(এনডিটিভি অনলাইনে প্রকাশিত নিশথা গৌতমের প্রতিবেদন থেকে অনূদিত)