করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ভারত। সংক্রমণে আগের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে। দেশটিতে করোনার ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই এবার পাওয়া গেছে ‘ট্রিপল মিউট্যান্ট ভ্যারিয়্যান্ট’। ধারণা করা হচ্ছে ইতোমধ্যেই দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে তা ছড়িয়ে পড়েছে।
মহারাষ্ট্র ও দিল্লিতেও এই ট্রিপল মিউট্যান্টের সংক্রমণ ছড়িয়েছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। তারা জানাচ্ছেন, করোনাভাইরাসের তিনটি আলাদা স্ট্রেইন মিলে তৈরি ভাইরাসের এই নতুন ভ্যারিয়্যান্টের সংক্রামক ক্ষমতাও প্রায় তিন গুণ। ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে এই নতুন স্ট্রেইনের কারণে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। করোনার এই ধরনের শক্তি অনেক বেশি, শারীরিক অবস্থার অবনতিও খুব দ্রুত হচ্ছে এই স্ট্রেইনে আক্রান্তদের। ঠিক সময়ে লাগাম দিতে না পারলে এবার সংক্রমণ সুনামির আকার ধারণ করতে পারে বলে সতর্কবাণী দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
নতুন এই ধরন কীভাবে মোকাবিলা করা যেতে পারে- এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আপাতত এর বিরুদ্ধে একের পর এক টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা করা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। তবে সবার আগে প্রয়োজন এর চরিত্র বিশ্লেষণ করা। প্রয়োজন নিয়মিত জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের। তবে ভারতের মতো দেশে এটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ ভারতে মোট আক্রান্তের মাত্র ১ শতাংশের ওপর এই জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে গড়িমসির কোনো জায়গা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ স্ট্রেইন ঠিক সময়ে ধরা না পড়ার কারণেই হয়তো অগোচরে এতটা ছড়িয়ে পড়েছে এই ‘ট্রিপল মিউট্যান্ট’। ভাইরাস যত ছড়ায় সেটির মিউটেশনের হারও তত বৃদ্ধি পায়। নতুন এই স্ট্রেইনটি শিশুদেরকেও সংক্রমিত করছে। তবে এখন পর্যন্ত নতুন ভ্যারিয়্যান্ট নিয়ে বিশেষ কোনো তথ্য নেই বিজ্ঞানীদের কাছে। যে কারণে আপাতত ‘ভ্যারিয়্যান্ট অব কনসার্ন’-এর বদলে ‘ভ্যারিয়্যান্ট অব ইন্টারেস্ট’-এর তালিকাতেই রাখা হয়েছে এটিকে।
অন্যদিকে করোনা সংক্রমণে আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে ভারতে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার সকালে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ১৪ হাজার ৮৩৫ জন, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণ। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছে ভারত।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ১০৪ জন। অর্থাৎ একদিন আগের তুলনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। ভারতে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছে ১ কোটি ৫৯ লাখ ৩০ হাজার ৯৬৫ জন।
ভারতে করোনা সংক্রমণের শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র, কেরালা, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, অন্ধ্র প্রদেশ এবং দিল্লি। মোট সংক্রমণের বেশিরভাগই এসব রাজ্যে।