ভারতে গত একদিনে আড়াই লাখের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। শনিবার (১৫ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে তার আগের ২৪ ঘণ্টায় এই আক্রান্তের পাশাপাশি ৪০২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
দিল্লিভিত্তিক এনডিটিভি ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবর বলছে, দেশটিতে একদিনে দুই লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ জনের শরীরে করোনা ধরা পড়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহামারিতে সেখানে এখন পর্যন্ত চার লাখ ৮৫ হাজার ৭৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় পজিটিভ হওয়ার সংখ্যা ১৪ দশমিক সাত শতাংশ থেকে বেড়ে ১৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ হয়েছে।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ১৪ লাখ ১৭ হাজার ৮২০ জন করোনা থেকে সেরে উঠেছেন। আর নিশ্চিত ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৪১ জনে।
মুম্বাইয়ে শুক্রবার ১১ হাজার ৩১৭ জনের শরীরে প্রাণঘাতী করোনা ধরা পড়েছে। যদিও আগের দিনের যেখানে আক্রান্ত ছিল ২১ দশমিক ৭৩ শতাংশ, একদিন পরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২০ শতাংশে। শুক্রবার শহরটিতে ৫৪ হাজার ৯২৪ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
মহারাষ্ট্রে একদিনে ৪৩ হাজার ২১১টি করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ১৯ জন। আর রাজধানী দিল্লিতে ২৪ হাজার ৩৮৩ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। আগের দিনের তুলনায় তা চার হাজার কম। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ৮০০টি।
ভারতে মহামারির তৃতীয় ঢেউ চলছে। এই বিপর্যয়ের মধ্যেই কঠোর সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পার্লামেন্টে বাজেট অধিবেশন শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।
প্রতিরক্ষা সূত্রের বরাতে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে ২৪ হাজার মানুষ উপস্থিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে ওমিক্রন দাপিয়ে বেড়ালেও শুক্রবার উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে মকর সংক্রান্তিতে মাঘ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। সাতচল্লিশ দিনব্যাপী মেলার প্রথম দিন শুক্রবারে (১৪ জানুয়ারি) দলে দলে মানুষকে সেখানে জড়ো হতে দেখা যাচ্ছে।
এ দিনে লক্ষাধিক ভক্তের গঙ্গায় পবিত্র স্নান করার কথা রয়েছে। হিন্দু ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস, মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গার জলে স্নান করলে পাপমোচন হয়।
গেল বছর দেশটিতে একই ধরনের জনসমাগম করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ জোরাল হতে ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু এ বছরের মাঘ মেলার আয়োজন বন্ধে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার টেলিভিশনের ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, গঙ্গাতীরে বিপুল সংখ্যক মানুষের ভিড়। তারা গঙ্গাজলে স্নান করছেন। কিন্তু সামাজিকদূরত্ব বজায় রাখার ন্যূনতম বালাই দেখা গেল না তাদের মধ্যে।
হিন্দি খবরের চ্যানেল এবিপি বলছে, জনসমাগমে অংশ নেওয়া ৭০ শতাংশ পূণ্যার্থীর মুখে মাস্ক ছিল না। তীর্থযাত্রীদের অবস্থানের জন্য গত কয়েক দিনে গঙ্গাতীরে বিশাল বিশাল তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছেন, জনসমাগমকে সামাল দিতে সেখানে পাঁচ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
মেলা চলাকালে সবাইকে করোনার বিধিনিষেধ মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। কিন্তু আয়োজন শুরু হওয়ার আগ থেকেই সেখান থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে।
জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা রাজি নারায়ণ মিশ্র বলছেন, মেলায় দায়িত্ব পালনকরা অন্তত ৩৮ পুলিশ কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এতে আসছে দিনগুলোতে উৎসবস্থল করোনা বিস্তারের হটস্পটে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গেল বছরের এপ্রিলে প্রতিবেশী রাজ্য উত্তরাখণ্ডের হিমালয় শহর হরিদ্বারে কুম্ভমেলায় কয়েক লাখ পূণার্থী জড়ো হয়েছিলেন। এমন সময় অনুষ্ঠানটি হয়েছিল, যখন দেশটির বেশ কয়েকটি শহরে অক্সিজেন ও হাসপাতালের শয্যার সংকট দেখা দিয়েছিল।
তবে এই বছর উত্তরাখন্ড কর্তৃপক্ষ নদীতে নেমে স্নান করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সংক্রমণকে উপেক্ষা করে উৎসবের আয়োজন জনস্বাস্থ্যের ওপর কী ধরনের পরিণতি বয়ে আনতে পারে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।