দ্বৈত কর পরিহার চুক্তির (ডিটিএএ) আওতায় ভারতের ‘সবচেয়ে অনুকূল’ বা ‘সবচেয়ে সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের’ (এমএফএন) মর্যাদা প্রত্যাহার করেছে সুইজারল্যান্ড। সুইস অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ভারতের সুপ্রিম কোর্টে নেসলে মামলার রায়ের প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট একটি মামলায় রায় দেন, কোনো দেশ ওইসিডি-তে (অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা) যোগ দিলে এমএফএন ধারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হয় না। বরং পূর্ববর্তী কর চুক্তি প্রাধান্য পায় এবং এটি কার্যকর করতে ‘প্রজ্ঞাপন’ প্রয়োজন।
নেসলে মামলা কী
ভারত লিথুয়ানিয়া এবং কলম্বিয়ার সঙ্গে এমন একটি কর চুক্তি করেছিল, যেখানে নির্দিষ্ট ধরনের আয়ের ওপর করহার ছিল ওইসিডিভুক্ত দেশগুলোর তুলনায় কম। পরে এই দেশগুলো ওইসিডিতে যোগ দেয়। তখন সুইজারল্যান্ড দাবি করেছিল, ভারতের সঙ্গে তাদের চুক্তিতে এমএফএন ধারা অনুযায়ী করের হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ হতে হবে।
কিন্তু ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন, কোনো দেশ ওইসিডিতে যোগ দিলেই এমএফএন ধারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হয় না। বরং পূর্ববর্তী কর চুক্তি অগ্রাধিকার পায়, যদি না এমএফএন ধারা ‘আয়কর আইনের ধারা ৯০’ অনুযায়ী প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা থাকে।নেসলে মামলায় ২০২১ সালে দিল্লি হাইকোর্ট এমএফএন ধারা কার্যকর করার পক্ষেই রায় দিয়েছিলেন। তবে, ২০২৩ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায় উল্টে দিয়ে জানান, প্রজ্ঞাপন ছাড়া এমএফএন ধারা কার্যকর হতে পারে না।
সুইজারল্যান্ডের মতে, এ রায় তাদের প্রত্যাশার বিরুদ্ধে গেছে এবং এতে নেসলেসহ অন্যান্য কর সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের অবস্থান দুর্বল হয়েছে।
পরিণতি
গত ১১ ডিসেম্বর সুইস অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ভারতীয় করদাতাদের জন্য সুইজারল্যান্ডে ডিভিডেন্ডের ওপর করহার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হবে।বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপ ভারতীয় কোম্পানি এবং সুইস বিনিয়োগের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। এটি বিশেষত সুইজারল্যান্ডে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর সাবসিডিয়ারির জন্য করের বোঝা বাড়াবে।
ট্যাক্স বিশেষজ্ঞ সন্দীপ ঝুনঝুনওয়ালা একে একতরফা পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, এটি আন্তর্জাতিক করনীতির স্থিতিশীলতা এবং স্বচ্ছতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।অন্যদিকে, অমিত মহেশ্বরী এই পদক্ষেপকে প্রতিশোধমূলক নয়, বরং সমতা রক্ষার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, উচ্চ করের কারণে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য পরিস্থিতি আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠবে।