ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশকে ৩ কোটি ডোজ টিকা দিতে চেয়েছিল। এর মূল্য ধরা হয়েছিল প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এ-সংক্রান্ত চুক্তির পর ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে এজন্য বাংলাদেশ ৬৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকাও পরিশোধ করে যা প্রায় পৌনে ২ কোটি ডোজের মূল্য। চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ডিসেম্বরে। সেরাম ইনস্টিটিউট কয়েক ধাপে দেড় কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করেছে। বাকি দেড় কোটি ডোজ তারা সরবরাহ করতে পারেনি। চুক্তি অনুযায়ী তা ৫০ লাখ ডোজ করে পর্যায়ক্রমে দেওয়ার কথা থাকলেও নিজেদের প্রয়োজন ও সংকটের যুক্তিতে সংস্থাটি তা আর দেয়নি। অথচ সে সময় বাংলাদেশের অনেক বেশি প্রয়োজন ছিল। এখন তারা টিকা দিতে চাইছে। কিন্তু এখন বাংলাদেশে পর্যাপ্ত টিকা মজুদ রয়েছে। এ মুহূর্তে বাড়তি টিকার দরকার নেই। তাই টিকা আর নিতে চায় না। বরং অতিরিক্ত পরিশোধ করা টাকা কীভাবে ফেরত পাওয়া যায় সে রাস্তা খুঁজছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন সেরাম কর্তৃপক্ষ আমাদের বাকি টিকাগুলো সরবরাহের আগ্রহ দেখাচ্ছেন কিন্তু এখন তো আমাদের তা প্রয়োজন নেই। যখন প্রয়োজন ছিল তখন তারা নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে আমাদের দিতে পারেননি। আমরা এখন তা নেব কি না এ নিয়ে নতুন করে আলোচনার প্রয়োজন আছে। আর যদি টাকা ফেরত চাই সেজন্যও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।’ অবশ্য স্বাস্থ্য বিভাগের অন্য এক পদস্থ কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এটা আর নেওয়া হবে না। এর বিপরীতে দেওয়া যে পরিমাণ টাকা বাংলাদেশ ফেরত পাবে তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে সেরাম কর্তৃপক্ষ এখন টিকাগুলোর সরবরাহ করতে বেশ আগ্রহী। কিন্তু ওই পরিমাণ টিকা এখন বাংলাদেশে এনে মজুদ করার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। কারণ আমাদের বিপুল পরিমাণ টিকা মজুদ আছে। এজন্য গণহারে তিন দিনে প্রায় ৩ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, দেশে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর ১১ মাস পর গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে গণহারে কভিড প্রতিরোধী টিকাদান কর্মসূচি শুরু করে সরকার। এ কর্মসূচির শুরুতে প্রয়োগ করা হয়েছিল ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি টিকা। এজন্য ২০২০ সালের ডিসেম্বরেই সেরামের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়। শুরুতে সব ঠিক থাকলেও ভারতে সংকট দেখা দেওয়ায় এক পর্যায়ে বাংলাদেশকে টিকা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সেরাম। এরই মধ্যে সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এর আগে গত বছরের ২৫ জানুয়ারি প্রথম চালানে কেনা টিকার ৫০ লাখ ডোজ বাংলাদেশকে পাঠিয়েছিল সেরাম। পরের মাসে ৫০ লাখের বদলে ২০ লাখ ডোজ টিকা পাঠায়। এরপর ভারতে টিকার সংকট ও চাহিদার কথা বলে রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটির সরকার। পরে ধাপে ধাপে আরও কিছু টিকা পাঠায় সেরাম। সব মিলিয়ে চুক্তির দেড় কোটি ডোজ টিকা বাংলাদেশে পাঠিয়েছে সেরাম। সময়মতো টিকা সরবরাহ করতে না পারায় তার প্রভাব এসে পড়ে বাংলাদেশের করোনা টিকা প্রয়োগের কার্যক্রমের ওপর। টিকা সংকটের কথা বিবেচনা করে একসময় প্রথম ডোজ প্রয়োগও বন্ধ করা হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চীনসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে টিকা কেনা হয়। বিভিন্ন উৎস থেকে উপহার হিসেবেও বেশ কিছু টিকা আসে। জুন থেকে স্বাভাবিকতা ফেরে দেশের টিকাদান কর্মসূচিতে। এর মধ্যে সেরাম টিকা দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তবে বাংলাদেশের হাতে পর্যাপ্ত টিকা থাকায় সেরামের টিকা আর নিতে চায় না সরকার। প্রথমে সরকারের পরিকল্পনা ছিল দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে টিকা কার্যক্রমের আওতায় আনার। পরে তা ৭০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এতে ১৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। প্রতি জনকে দুই ডোজ টিকা দিতে হলে ২৭ কোটি ৬০ লাখ টিকা প্রয়োজন। পরিকল্পনা ছাড়াও দেশে ১২ বছর ও তার বেশি বয়সী শিশু-কিশোরদেরও টিকা প্রয়োগ চলছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশে বিভিন্ন ধরনের সাড়ে ১২ কোটির বেশি প্রথম ডোজ, ৮ কোটি ৫৮ লাখ দ্বিতীয় ডোজ ও সাড়ে ৪০ লাখ তৃতীয় ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছে।
পিএসএন/এমঅাই