ফলপ্রসু আলোচনার পর বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনগুলো তাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেয়ায় ফের বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রফতানিসহ বন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
সোমবার সকালে দুই দিন অতিবাহিত হওয়ার পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিলে স্থলবন্দরটির কার্যক্রম শুরু হয়। এতে বন্দরে ফিরে এসেছে কর্মচাঞ্চল্য।
এর আগে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃক বেনাপোলের দুটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স সাসপেন্ড ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শনিবার সকাল থেকে আমদানি-রফতানিসহ কাস্টমস ও বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেন বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংগঠন। এর ফলে বন্ধ হয়ে যায় ভারতের সাথে আমদানি-রফতানি, বাণিজ্যসহ বন্দরের পণ্য লোড-আনলোড।
রোববার দফায় দফায় বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস স্টাফ এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দের সাথে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সাথে ফলপ্রসু আলোচনার পর রোববার সন্ধ্যার পর তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার ভারত থেকে বন্ড লাইসেন্সের (শুল্কমুক্ত) মাধ্যমে আমদানিকৃত ডেনিম ফেব্রিক্সের ট্রাকে করে আনা প্রায় অর্ধকোটি টাকার শাড়ি, থ্রিপিস, বাংলা মদ, ফেন্সিডিল, বিদেশী সিগারেট, ওষুধ, কারেন্ট জালসহ বিপুল পরিমাণ ভারতীয় পণ্য আটক করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার সাথে ভারতীয় ড্রাইভারের সরাসরি সহযোগিতা থাকলেও ট্রাকসহ ড্রাইভারকে ছেড়ে দেয়া হয়। আমদানিকৃত ডেনিম ফেব্রিক্সের আমদানিকারক ঢাকাস্থ অনন্ত ডেনিম টেকনোলজি লিমিটেড ও ফ্যাশান ফোরাম লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠান।
এ ঘটনায় বুধবার বেনাপোলের শিমুল ট্রেডিং এজেন্সি ও আইডিএস গ্রুপ নামে দুইটি সিঅ্যান্ডএফ লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি সিঅ্যান্ডএফের কর্মচারীদের নামেও মামলা করা হয় বেনাপোল পোর্ট থানায়।
এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের আটক না করে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স সাময়িক বাতিল ও কর্মচারীদের নামে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকালে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন, ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতি এক যৌথ সভায় আমদানি-রফতানিসহ কাস্টমস ও বন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
লাইসেন্স পুনর্বহাল ও মামলা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। রোববার সকালে বেনাপোল কাস্টমস হাউজ মিলনায়তনে কাস্টমস কমিশনার মো: আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সার্বিক বিষয় নিয়ে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে যুগ্ম কমিশনার আব্দুল রশীদ মিয়া, উপ কমিশনার আহসানুল কবীরসহ কাস্টমসের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন, সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা, সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ এসোসিয়েশনের সভাপতি মুজিবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমানসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিকেলে আর এক দফা ফলপ্রসু আলোচনা শেষে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেন আন্দোলনকারীরা।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, আমাদের সাথে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। তারা আমাদের সমস্যাগুলো অনুধাবন করে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমাধান করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। সোমবার সকাল থেকে আমদানি-রফতানিসহ বন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম আগের ন্যায় চলবে বলে তিনি জানান।
বেনাপোল কাস্টম কমিশনার মো: আজিজুর রহমান জানান, উভয় পক্ষের মধ্যে বিভিন্ন দাবি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনা ফলপ্রসু হওয়ায় বন্দর ব্যবহারকারীরা তাদের কর্মবিরতি তুলে নিয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন। দুই পক্ষ বসে সমস্যাগুলো সমাধানকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাজের গতি বাড়ানোর জন্য কাস্টমসের সব কর্মকতা, কর্মচারীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
পিএসএন/এমঅাই