আজ ১৪ মার্চ বিশ্ব পাই দিবস। গাণিতিক ধ্রুবক পাই (π) এর সম্মানে উদযাপিত হয় দিনটি। পাই-এর মান ৩.১৪। এজন্য প্রতি বছর ১৪ মার্চকে সারা বিশ্বের গণিতবিদগণ পাই দিবস হিসেবে পালন করেন। আবার এইদিনে এই দিবসের আরও কারণ আছে, যেমন-এদিন আপেক্ষিকতার তত্ত্ব প্রদানের জন্য সুখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইনেরও জন্মদিন। এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন আরেক বিশ্বখ্যাত পদার্থবিদ স্টিভেন হকিং।
তবে পাই দিবসের আরও কয়েকটি তারিখ রয়েছে। যেমন- ২২ জুলাই (২২/৭) তারিখটি এদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত। এছাড়াও ১০ নভেম্বর, যা কি না বছরের ৩১৪ তম দিন (অভিবর্ষ বা লিপ ইয়ারের ক্ষেত্রে ৯ নভেম্বর) আপাতত পাই দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়। কোথাও কোথাও ২১ ডিসেম্বর (বছরের ৩৫৫ তম দিন) এবং লিপ ইয়ারের ক্ষেত্রে ২০ ডিসেম্বর দুপুর ১:১৩ মিনিটে চৈনিক পাই ভগ্নাংশের (৩৫৫/১১৩) সঙ্গে মিল রেখে আপাত পাই দিবস উদযাপন করা হয়।
১৯৮৮ সালে পদার্থবিদ ল্যারি শ’ পাই (π) দিবসের ধারণার প্রবর্তন করেন। সে প্রথমবারের মতো পাই দিবস পালিত হয় সানফ্রানসিসকোর একটি বিজ্ঞান জাদুঘরে। জাদুঘরের বৃত্তাকার স্থানে এর কর্মচারী ও দর্শনার্থীরা মিলে পাই আকৃতির কেক কেটে দিনটি উদযাপন করেন। ঐ জাদুঘরের কর্মকর্তা ল্যারি শ এই দিবস উদযাপনের উদ্যোক্তা বলে তাকে ‘পাই-এর রাজপুত্র’ বলা হয়।
জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে দ্বিতীয় জীবনে প্রথম পাই দিবস উদযাপনকে যোগ করেছে। ২০০৯ সালের ১২ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র সরকার ১৪ মার্চকে জাতীয় পাই (π) দিবস হিসেবে পালনের অনুমোদন দেয়। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি অনেক সময় তাদের নতুন শিক্ষার্থীদের গ্রহণপত্র পাই দিবসে ডাকে দিয়ে থাকে।
ইউক্লিডীয় সমতলীয় জ্যামিতিতে, বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাতকে পাই (π) হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। উইলিয়াম জোনস সর্বপ্রথম ১৭০৬ সালে পাই প্রতীকটির প্রচলন করেন। তবে এ প্রতীকটিকে জনপ্রিয় করেন সুইস গণিতবিদ লিওনার্দো ইউলার।
গণিত, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিদ্যার অনেক সূত্রে পাইয়ের ব্যবহার দেখা যায়। বর্তমানে কম্পিউটারের সাহায্যে π এর মান দশমিকের পর ১ ট্রিলিয়ন পর্যন্ত বের করা সম্ভব হয়েছে।
π গ্রিক বর্ণমালার ষোলতম বর্ণ। গ্রিক শব্দ ‘περιφέρεια’ (যার অর্থ periphery) এবং ‘περίμετρος’(যার অর্থ perimeter) এর প্রথম বর্ণ হচ্ছে π। ধরা হয়ে থাকে পরিধি বা perimeter শব্দটি থেকেই π এর ব্যবহার হয়ে আসছে।
পাই দিবস উদযাপন হয় কখনো ১৪ মার্চ দুপুর ১টা ৫৯ মিনিটে। এই দিন দুপুর ১টা ৫৯ মিনিট ২৬ সেকেন্ডকে পাই সেকেন্ড বলা হয়। পাই সেকেন্ডে পাই দিবস পালনের মধ্য দিয়ে পাইয়ের মানের (৩.১৪১৫৯২৬) কাছাকাছি সময়ে দিবসটি উদযাপন করা সম্ভব হয়।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি ২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশে পাই দিবস উদযাপিত হচ্ছে। বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির উদ্যোগে দেশে এই দিবস উদ্যাপন শুরু হয়। দেশের বেশ কিছু গণিত ক্লাব ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানা আয়োজনের মধ্যে দিবসটি পালিত হয়। আয়োজনের মধ্যে রয়েছে পাই শোভাযাত্রা, পাই-এর মান বলা, পাই নিয়ে আলোচনা ইত্যাদি। এছাড়া রয়েছে পাই দিবসের শুভেচ্ছা বিনিময়। ক্রমেই এটি আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।