‘ক্ষমতায় যেতে রাজনীতিবিদরা উসখুস করছেন’- জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এমন বক্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, একজন উপদেষ্টা মন্তব্য করেছেন, রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য উসখুস করছে। এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক কথা। আমরা আশা করি না, তিনি এ ধরনের মন্তব্য করবেন। আমরা দ্রুত নির্বাচন চাচ্ছি, কারণ যত দেরি করবেন হাসিনারা ফিরে আসবে। আমরা সহযোগিতা করছি, আপনারাও সহযোগিতা করেন। আমরা ক্ষমতায় যেতেই চাই, সেজন্যই তো রাজনীতি করছি।
ফখরুর বলেন, পরিষ্কার করে বলতে চাই, আবারও ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে বাদ দিয়ে কিছু করার চেষ্টা করবেন না। মাইনাস টু ফর্মুলা আগেও কাজ করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না।
রোববার (৩ নভেম্বর) বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ-এ বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, আমরা ভয়াবহ দানবের হাত থেকে মুক্ত হয়েছি। আপনাদের সঙ্গে যখনই দেখা হতো তখনই বলতাম আমাদের বুকে পাথর হয়ে বসে আছে। পাথর গেলেও এখনো স্বস্তি নেই। কোথায় যেন আটকা আছি। আটকা আছি, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এখন সরকার আছে, সেটা অন্তর্বর্তী সরকার।
তিনি বলেন, সংবাদপত্রে এসেছে প্রতি বছর ১২ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেছে। হিসাব করে দেখা গেছে, ১০০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেছে। একেবারে অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ধ্বংস করেছে মানবিকতা। যেখানে যাবেন আওয়ামী লীগের চোরেরা বসে আছে। এখনো বসে আছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার শুধু বিএনপির সঙ্গে নয়, সব দলের নেতাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। ঢাকা শহরের সব সড়কের নামগুলো বিশিষ্ট মানুষের নামে করে দিয়েছিলেন সাদেক হোসেন খোকা।
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এখন তরুণ প্রজন্মের যুগ। যখন আব্বাস ও খোকা ভাই ছিলেন তখন ঢাকা শহর কাঁপতো। তোমাদেরও কাঁপাতে হবে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা খোকা ভাইয়ের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। কখন পরাজিত হন? যখন মানুষটিকে মানুষ নিজের কাছের মানুষ হিসেবে বেছে নেয়। আমি তাকে কখনো উত্তেজিত হতে দেখিনি, অত্যন্ত ভাবনা-চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতেন। তার মৃত্যু আমাদের কাছে পাহাড়ের মতো ভারী হয়েছিল।
মির্জা ফখরুল বলেন, ঢাকাবাসী খুব ভাগ্যবান যে মির্জা আব্বাস ও সাদেক হোসেন খোকার মতো দুজন মানুষকে পেয়েছেন, যারা খুবই কর্মীবান্ধব।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আমার কাছে রাজনীতির পরিস্থিতি ঘোলাটে মনে হচ্ছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার দোসররা এখনো সর্বত্র।
নির্বাচন বিলম্বিত করে আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফেরানোর আশঙ্কা প্রকাশ করে মির্জা আব্বাস বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কাছাকাছি বিশেষ একজন ব্যক্তি দেশকে ধ্বংসের কাছাকাছি নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে বৈরিতা ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, বৈরিতা যেটা বলা হয় সেটা বাইরের মানুষের বানানো।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য গণমাধ্যমে বিকৃতি হচ্ছে অভিযোগ করে মির্জা আব্বাস বলেন, রাজনীতিবিদদের বক্তব্য যথাযথভাবে প্রচার না হলে তার অর্থ ভিন্ন হয়ে দাঁড়ায়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বিএনপির আন্তর্জাতিক কমিটির সদস্য ও সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন।