ঢাকার দোহারে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের জমিতে থাকা দোকানঘর ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই দোকানের মালিক রোকনুজ্জামানের বাবা আমিন উদ্দিন গোদা এলাকায় রাজাকার হিসেবে পরিচিত বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
গত শনিবার (১৩ জুলাই) বিকেলে উপজেলার নারিশা ইউনিয়নের মেঘুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে আয়োজিত সভায় আমিন উদ্দিনকে যুদ্ধাপরাধী উল্লেখ করে বক্তব্য দেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। তারা বিদ্যালয়ের জমিতে তাঁর ছেলের দোকান থাকতে দেওয়া হবে না– এমন ঘোষণাও দেন। এর পরপরই তিনটি দোকান ভেঙে দেওয়া হয়।
রোকনুজ্জামানের অভিযোগ, শনিবার বিকেলে ঢাকা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা তাঁর দোকানের পাশে সভা করেন। তা শেষ হওয়ার পরই ওই নেতাদের নির্দেশে রাহাত মাঝির নেতৃত্বে তাঁর দোকান ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ সময় দোকানে থাকা মালপত্রও লুট হয়।
রোকনের ভাষ্য, তাঁর বাবা শিক্ষক ছিলেন। একটি মহল অনেক আগে থেকেই তাদের মালিকানাধীন জমি দখলের পাঁয়তারা করছিলেন। তাদের উস্কানিতেই এমন হামলা হয়েছে। বিষয়টির সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই সভায় ঢাকা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান ছাড়াও যুদ্ধকালীন কমান্ডার ও সাবেক চেয়ারম্যান ডা. আবুল কালাম, দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হক বেপারি, বীর মুক্তিযোদ্ধা তাবারক বেপারি উপস্থিত ছিলেন। তারা ঘোষণা দেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমিতে বিতর্কিত যুদ্ধাপরাধী আমিন উদ্দিনের কোনো দোকানঘর থাকতে দেওয়া হবে না।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুল হক বেপারি বলেন, বিতর্কিত রাজাকার আমিন উদ্দিন গোদা বিদ্যালয়ের জমিতে মালিকানা দাবি করে দোকান নির্মাণ করেছিলেন। ওই দিনের সভায় গোদার ছেলে রোকনুজ্জামানকে দোকানঘর ভেঙে নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। পরে কারা হামলা করে দোকান ভেঙে দেয়, তা জানা নেই।
ঢাকা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান বলেন, রাজাকারের ছেলে রোকনুজ্জামান বিদ্যালয়ের জমি দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করেছে। এর প্রতিবাদে নারিশা ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণকে নিয়ে এলাকাবাসী প্রতিবাদ সভা করেন। তিনিও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
মাহবুবুর রহমানের ভাষ্য, মৃত আমিন উদ্দিন গোদা চিহ্নিত রাজাকার। ১৯৬৭ সালে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ছিলেন। সেই সুযোগে বিদ্যালেয়র ১২৪ শতাংশ জমি দখল করেন। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা তা উদ্ধার করে বিদ্যালয়ের নামে ফিরিয়ে দেন। পরবর্তীতে তা আবারও দখল করা হয়। এলাকাবাসীর নেতৃত্বে সেই জমি দখলমুক্ত করার চেষ্টা করছেন।
দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন-অর-রশিদ বলেন, সংবাদ পেয়ে টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। জমির মালিক দাবিদার রোকনুজ্জামান দোকানঘর ভাঙার বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়ে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবেন।