সাতক্ষীরায় প্রথম ধাপে বাগান থেকে পরিপক্ক আম সংগ্রহ ও বাজারজাত করা শুরু হয়েছে। শুক্রবার (৫ মে) থেকে সাতক্ষীরার গোবিন্দভোগ, গোপালভোগসহ আগাম জাতের আম গাছ থেকে পেড়ে বাজারজাত শুরু করেছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
নির্ধারিত আম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রথম ধাপে ১২ মে আম পাড়ার কথা ছিল। পরে তা সংশোধন করে ৫ মে করা হয়। প্রথম পর্যায়ে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বাই, গোলাপখাস ও বৈশাখীসহ কয়েক প্রজাতির আম পাড়ার অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। অনুমতি পাওয়ার পর সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন আমবাগান থেকে আম পেড়ে তা সুলতানপুর বড় বাজারসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজারে বাজারজাত করছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী, পরবর্তী ধাপে আগামী ১০ মে হিমসাগর, ১৮ মে থেকে ল্যাংড়া ও ২৮ মে থেকে আম্রপালি আম সংগ্রহ ও বাজারজাত করা যাবে।
তবে জেলা প্রশাসনের নিধারিত এ তারিখ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলার আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ, ইচ্ছামতো তারিখ নির্ধারণ করে এবছর পরিকল্পিতভাবে সাতক্ষীরার আমের বাজার নষ্ট করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও জেলা কৃষি অফিসের সমন্বয়ে প্রকাশিত আম ক্যালেন্ডারের কারণে পথে বসতে শুরু করেছেন প্রান্তিক পর্যায়ের আমচাষিরা।
চাষিরা বলেন, ২০২১ সালে ২ মে গোপালভোগ ও গোবিন্দভোগ প্রজাতির আম পাড়ার অনুমতি দেওয়া হলেও এবার ১০ দিন বৃদ্ধি করে ১২ মে করে জেলা প্রশাসন। হিমসাগর আম গতবছর ১৫ মে পাড়ার অনুমতি থাকলেও এবছর করা হয়েছে ২৫ মে। আম্রপালি আম পাড়ার তারিখ ১১ দিন বাড়িয়ে ৪ জুনের পরিবর্তে করা হয়েছে ১৫ জুন।
এবার ৬০ বিঘা জমিতে আমচাষ করেছেন আবু সুফিয়ান। এবারের আম ক্যালেন্ডার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সিজনের শুরুতে ঢাকার বাজারে সাতক্ষীরার আম পৌঁছায়। অথচ এবার রাজশাহীর আমের বাজার বাড়াতে পরিকল্পিতভাবে সাতক্ষীরার আম বাজারজাতকরণের তারিখ বাড়ানো হয়েছে। রাজশাহীর চেয়ে ১৫-২০ দিন আগে সাতক্ষীরার আম পাকা শুরু হয়। অথচ এবার রাজশাহী ও সাতক্ষীরায় প্রায় একই সময়ে আম পাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ফলে গাছের বেশিরভাগ আম পেকে পড়ে গেছে। ঝড়ে কিছু আম নষ্ট হয়েছে। ঢাকার বাজারে রাজশাহীর আম ওঠার কারণে সাতক্ষীরার আম কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
আম ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, কয়েক লাখ টাকা দিয়ে এবার ৪০টি আমবাগান কিনেছিলাম। এর মধ্যে পাঁচটি বাগানের গোবিন্দভোগ প্রজাতির আম পাক ধরলেও সময়মতো বাজারে তুলতে পারিনি। এতে আর্থিকভাবে প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। গতবছর যে আম ৭০-৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল, এবার সেই আম ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হচ্ছে।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলার চার হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আমচাষ করেছেন ১৩ হাজার ১০০ চাষি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় এক হাজার ২৩৫ হেক্টর, কলারোয়ায় ৬৫৫ হেক্টর, তালায় ৭১৫ হেক্টর, দেবহাটায় ৩৭০ হেক্টর, কালীগঞ্জে ৮৩৫ হেক্টর, আশাশুনিতে ১৪৫ হেক্টর ও শ্যামনগরে ১৬০ হেক্টর জমিতে আমচাষ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নির্ধারিত তারিখের আগে যদি কোনো বাগানে আম পাকে, তাহলে ওই এলাকার সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বাজারজাত করতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘আম ক্যালেন্ডারটি না করলে নই বলে করা। মূলত জেলায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা অপরিপক্ব অবস্থায় আম ভেঙে বাজারজাত করেন। এ কারণে জেলা প্রশাসন ও জেলা কৃষি বিভাগের সমন্বয়ে আম ভাঙার (পাড়া) একটি প্রাথমিক তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।’
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ হুমায়ন কবির বলেন, নির্ধারিত সময়ের আগে যদি কোনো ব্যবসায়ী বা চাষি অপরিপক্ব আম পেড়ে বাজারজাত করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পিএসএন/এমঅাই