করোনাভাইরাস যাতে ছড়াতে না পারে তার জন্য জনসমাগম এড়াতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া তিনি সবাইকে মাস্ক পরার অনুরোধ জানিয়েছেন। অনুরোধ জানিয়েছেন বাইরে থেকে ঘরে ফিরে নাকে-মুখে গরম পানির ভাপ নিতেও। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করেছি বলে বোধহয় মানুষের মাঝে একটি বিশ্বাস জেগে গেছে। যার জন্য সকলেই ভাবছিল কিছু হয়তো হবে না। আমি বারবার বলেছিলাম ভ্যাকসিন নিলেও সাবধানে থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) জাতীয় সংসদে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুতে সংসদে শোকপ্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে একথা বলেন তিনি।
সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিয়েশাদির যেগুলো তারিখ হয়েছে তা একটু ঘরোয়াভাবে করা। বেশি লোকের সাথে না মেশা। বাইরে দোকানপাটে গেলেও খুব অল্পসময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে ঘরে ফিরে আসতে হবে। জনসমাগমটা যাতে না হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা অফিস-আদালতে বলে দিয়েছি সীমিত লোক নিয়ে কাজ করতে হবে। বেশি যেন মেশামিশি না হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। অনেকেই সিমট্রম ছাড়াই করোনায় আক্রান্ত থাকতে পারেন। তার কোনো সমস্যা হচ্ছে না কিন্তু যার সঙ্গে কথা বলছেন তা মিশছেন তার কিন্তু হয়ে যাচ্ছে। এটাও মাথায় রাখতে হবে।
নতুন করে করোনার প্রাদুর্ভাব হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস আমরা মোটামুটি নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছিলাম। সবার মনে হচ্ছিল সবকিছু যেন ঠিক হয়ে গেছে। আমরা একেবারে কমিয়েও এনেছিলাম। সবকিছু নিয়ন্ত্রণেও এনেছিলাম। অর্থনৈতিক কাজগুলোও চলছিল। কিন্তু আবার সারাবিশ্বব্যাপী এই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এবারের করোনাভাইরাসটি হঠাৎ করে খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনটি বাংলাদেশেও। আমাদের ২৯, ৩০ এবং ৩১ মার্চ- এমন দ্রুত বেড়ে গেছে যেটা চিন্তাও করা যায় না।
মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা বন্ধ হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই স্বাস্থ্যবিধি মানাটা কিন্তু বন্ধ হয়েছে। আমরা হিসাব করে দেখেছি যতগুলো বড় বড় বিয়ের অনুষ্ঠান, যারা এই বিয়েবাড়িতে গেছে ফিরে এসে তাদের অনেকেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। যারা কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে চলে গেছেন, সেখান থেকে যারা এসেছে তাদের বেশি করে ধরেছে। এই দাওয়াত, খাওয়া-টাওয়া, দোকান-পাটে ঘোরাঘুরি যেন অতিরিক্ত বেড়ে গিয়েছিল।
করোনা মোকাবিলায় দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, প্রথমে করোনাভাইরাস দেখা দেয়ার পর যেভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেছিলাম। আমাদের সেইভাবে আবার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ইতোমধ্যে কিছু নির্দেশনা আমরা দিয়েছি। ধীরে ধীরে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি নিয়ন্ত্রণে আনতে। সেই ক্ষেত্রে জনগণের সহযোগিতা দরকার। করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন থাকলে এভাবে আমাদের মানুষগুলোকে হারাতে হতো না।
সবাইকে মাস্ক পরার অনুরোধ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি সবাইকে অনুরোধ করব মাস্ক পরে থাকবেন। কারণ করোনাভাইরাস নাক থেকে গিয়ে সাইনাসে আক্রমণ করে। সেই ক্ষেত্রে সবাইকে মাস্ক পরে থাকতে হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে নাকে ভাপ নেয়া। ভাপ নেয়াটা খুবই কাজে লাগে। যখনই কেউ একটু বেশি মানুষের সাথে মিশবেন- বা দোকানপাট অফিসে যাবেন। ঘরে ফিরে একটু যদি গরম পানির ভাপ নেন। এটা খুব কঠিন কাজ নয়। যেকোনো একটি পাত্রে ভাপ তোলা গরম পানি। যেটাতে ভাপ আসে- ওই গরম পানির ওপর মুখটা রেখে- দরকার হলে একটি কাপড় দিয়ে মাথাটা ঢেকে গরম পানির ভাপটা নিঃশ্বাসে নিলে পরে নাকের ভেতরে সাইনাস পর্যন্ত চলে যায়।
সংসদে বক্তব্য দেয়ার সময় নিজের মাস্ক না থাকার কারণ ব্যাখ্যা দিয়ে সংসদ নেতা বলেন, আমার মাস্ক আছে মাননীয় স্পিকার। বক্তৃতা দেয়ার জন্য খুলে রেখেছি। তাছাড়া আমার আশপাশে এখন কেউ নেই। আমি এটা পরি। আবার কেউ যেন মনে না করেন আমি মাস্ক না পরেই (মাস্ক পরার কথা) বলছি। মাস্ক কিন্তু আমার সঙ্গেই আছে। পরেই বলি। মাস্ক পরে কথা বলতে গেলে কথা একটু পরিষ্কার হয় না।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, আমার আগে সবসময় সাইনাসে ভুগতাম করে এই ভাপ নেয়াটা আমার একটা অভ্যাস ছিল। ভাপটা নিয়ে ফলে জার্মটা নাকের যেখানে থাকার সম্ভাবনা আছে সেখানে পৌঁছাবে। সেটাকে শেষ করে দেবে বা দুর্বল করে দেবে। আরেকটা কাজ আমি নিজে করি। তাহলো কোথাও বের হওয়ার আগে নাকে একটু সরিষার তেল দেয়া বা যেকোনো তেল দেয়া। এটাও করতে পারেন। এটা অনেকে গ্রাম্য ব্যাপার মনে করতে পারেন। কিন্তু আমার মনে আছে ছোটবেলায় যখন গোসল করতে যেতাম দাদি নাকে, কানে, নাভিতে সরিষার তেল দিয়ে দিতেন। নাকে পানি ঢুকবে না এ জন্যই। আমি মনে করোনাকালে একটাও একটা ভালো কাজ। করোনাভাইরাস আসার পর আমি নিয়মিত এটা করছি।