বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ডুমুরিয়ার চাঁদগড়, জালিয়াখালী ও শম্ভুনগর ভদ্রা নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে ২৯ নম্বর পোল্ডারের তিনটি গ্রাম ‘মানচিত্র’ থেকে হারিয়ে গেছে।
এই এলাকার কয়েকশ’পরিবারকে ভিটামাটি ছাড়তে হয়েছে। রাক্ষুসে নদী সবকিছু কেড়ে নেওয়ায় শত শত পরিবার আজ এলাকা ছাড়া। যারা রয়েছেন, তারাও ভাঙনে সব হারিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
এক সময়ের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো নদীর ভয়াল গ্রাসে আজ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে। অভাব এখন যাদের নিত্যসঙ্গী। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ভদ্রা নদীতে বিলীন হয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দুটি মসজিদ, দুটি ঈদগাহ, একটি মন্দির, একটি মাদরাসা, পাঁচটি স্লুইস গেট, জমিসহ হাজার হাজার কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি ও অসংখ্য গাছ। তিনি বলেন, একদিকে আমাদের বড় সমস্যা দক্ষিণাঞ্চলের বেড়িবাঁধে ভাঙন অপরদিকে সীমান্তের ৫৪টি নদীর পানি ছেড়ে দেয়া। আমাদের প্রতিবেশী দেশ (ভারত) শুকনো মওসুমে পানি আটকিয়ে রাখে।
আর বর্ষার সময় একসঙ্গে সব গেট খুলে দেয়। শুনে আসছি, প্রতিবেশী দেশটি আমাদের সবচেয়ে বড় বন্ধু। কিন্তু তারা গ্রীষ্মে পানি না দিয়ে আমাদের দেশকে বানায় মরুভূমি। আর বর্ষার সময় পানি ছেড়ে দিয়ে বন্যা উপহার দেয়। আমরা অবাক! তিনি বলেন, সাড়ে ১৫ বছর আমাদের একটা সরকার ছিল। তারা বলতো দেশকে সিঙ্গাপুর ও কানাডা বানিয়েছে।
এ হলো সিঙ্গাপুর ও কানাডার দৃশ্য। তারা বলতো-আমাদের নাকি উন্নয়নের মহাসড়কে উঠায়ছে। তাদের সব ছিল মিথ্যা ও ভোগাস। তারা জনগণের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছি। তিনি বলেন, শহীদেরা আমাদের অনুপ্রেরণা, এক অদম্য চেতনার সাইরেন।
ফ্যাসিবাদ আন্দোলনে শাহাদাৎ বরণকারী ভাইয়েরা ঘুমন্ত জাতিকে জাগিয়ে তুলেছেন। হতাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত বাংলার মাটি ও মানুষের হৃদয়ে আশার ঢেউ তুলেছে একবিংশ শতাব্দীর সাহসী যুবক আবু সাঈদ, মুগ্ধ এবং তার সঙ্গীরা। জামায়াতে ইসলামী আজীবন শহীদ পরিবারের পাশে থাকবে কথা দিয়ে তিনি বলেন, যেকোনো প্রয়োজনে জামায়াতে ইসলামীকে স্মরণ করবেন, আমরা সর্বদা আমাদের সাধ্যমতো আপনাদের সুখে-দুঃখে সহযোগিতা করবো ইনশাআল্লাহ। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এ জাতির প্রয়োজনে জীবন দিয়ে হলেও তার দেশের মানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করবে।
জুময়াবার ( ৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে জেলেখালী গ্রামে ভদ্রা নদীর ভাঙনে ভিটা বাড়ি হারা পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিরতণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
ডুমুরিয়া উপজেলা শরাফপুর ইউনিয়নের বানিয়াখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে উপজেলা আমীর মাওলানা মোক্তার হোসেন এর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা হাবিবুর রহমান এর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, জেলা সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্লা, আশরাফুল আলম, ছাত্রশিবিরের জেলা সভাপতি হাফেজ বেলাল হুসাইন রিয়াদ, ডুমুরিয়া উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, ঢাকাস্থ খুলনা ক্লাবের সভাপতি সরদার আবদুল ওয়াদুদ, মাওলানা আশরাফ আলী, মাওলানা আজহারুল ইসলাম, মাওলানা মনিরুল ইসলাম, আবুল হোসেন, মাওলানা কামরুজ্জামান, আব্দুল হাকিম, ফরিদুজ্জামান, শেখ বেলাল হুসাইন, মাওলানা আব্দুল হান্নান, শ্রমিক নেতা আল আমীন গোলদার, ছাত্রশিবির নেতা মোমিনুল ইসলাম, আবু তাহের, সামিদুল হাসান লিমন প্রমুখ। প্রধান অতিথি সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার স্থানীয় চাঁদগড়, জালিয়াখালী ও শম্ভুনগর গ্রামের দুই শতাধিক পরিবারের মাঝে নগদ অর্থ, চাল, ডাল ও আলুসহ বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারকে ছাত্র-জনতাই বসিয়েছে। তাদের মূল কাজ হচ্ছে, রাষ্ট্রের যে বিশাল ক্ষতিসাধন করা হয়েছে তার সংস্কার করা। রাষ্ট্রের যেসব জায়গায় ক্ষতি করা হয়েছে দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা এগুলোর পুনর্বিন্যাস করবেন। নির্বাচনের জন্য একটা অনূকূল পরিবেশ তৈরি করবেন।’ ‘যখনই অনূকূল পরিবেশ তৈরি হয়ে যাবে, তখন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে তারা আবার নিজ নিজ জায়গায় চলে যাবেন। আমরা সেই দিনের অপেক্ষায় আছি। আমরা তাদেরকে সঙ্গত সময় দেওয়ার পক্ষে। এই কাজগুলো করার জন্য যতটুকু মিনিমাম সময় দেওয়ার প্রয়োজন আমরা সেটা দেবো। আমরা এ কথা বারবার বলেছি।
তিনি বলেন, আমাদের আকাশ এখনও কালো মেঘমুক্ত হয়নি। এখনো বাংলাদেশের আকাশে শকুনের নজর রয়েছে। আমাদেরকে এখনো আত্মতৃপ্তিতে ভোগার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের মানুষকে হয়তো এখনো অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আমরা সবাই তো প্রস্তুত আছি সেই ত্যাগ শিকার করতে।
সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, প্রত্যেক ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করবে। কেউ কাউকে বাঁধা দেবে না। তিনি বলেন, সারাদেশে চলছে দুর্নীতি, অর্থনৈতিক শোষণ ও জুলুম-নির্যাতন। আমাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলের শত-শত নেতা-কর্মীদের খুন ও গুম করা হয়েছে।
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে (রাহি.) মিথ্যা মামলায় আজীবন কারাদন্ড দিয়ে রেখে ক্ষ্যান্ত হয়নি। তাঁকে সঠিক চিকিৎসা না দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গত ১৫ বছরের মধ্যে ৭ বছরই কারাগারে কাটিয়েছি। যার কারণে আপনাদের খেদমত করতে পারিনি। আপনাদের জন্য আমি কারাগারে বসে দোয়া করেছি। আমার পিতাসহ অনেক আত্মীয়-স্বজন দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। আমি তাদের কাছে থাকতে পারিনি। আলহামদুলিল্লাহ এতকিছুর পরও হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে ৫ আগস্ট দ্বিতীয়বার দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতি আজ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। এমতাবস্থায় আপনাদের সাথে দেখা করতে পারায় আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে একটি হিংসা ও বিদ্বেষমুক্ত সমাজ গঠনে তৎপর হই এবং সমাজের অবহেলিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসি। একে অপরের সুখানন্দ এবং দুঃখ-কষ্ট ভাগ করে নিই। আমরা আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ যে, আপনারা আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে এখানে এসেছেন। আপনাদের জন্য বুক ভরে দোয়া করি। আপনারাও আমাদের জন্য দোয়া করবেন।