রাজধানীর মিরপুরের দারুস সালাম এলাকার এক দরিদ্র্য পরিবারের সন্তান অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া কিশোর আসামিকে উপদেশ দিয়ে হাইকোর্ট বলেছেন, তোমার সামনে অনেক সুযোগ। পড়ালেখা করে বড় হতে হবে। বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। বড় অফিসার হয়ে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসবে। আমরা তোমার জন্য দোয়া করি।
বুধবার (২২ নভেম্বর) নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে দায়ের করা মামলায় কিশোরের জামিন শুনানিকালে বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ উপদেশ দেন।
আদালতে কিশোরের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম সোহেল, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমি।
গত ১২ নভেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে অষ্টম শ্রেণির ওই কিশোর ও তার সহপাঠীদের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন এক মেয়ে শিক্ষার্থীর মা। মিরপুরের দারুস সালাম থানায় এই মামলা দায়ের করা হয়। এই মামলায় আগাম জামিন নিতে আদালতে এসেছিল কিশোর।
জানা গেছে, ওই কিশোরের বাবা আমির হোসেন ঘুরে ঘুরে হাঁস-মুরগি বিক্রি করেন। এক রুমের বাসায় স্ত্রী ছেলে-মেয়েসহ পাঁচজন বসবাস করেন।
দীর্ঘ সময় ধরে ওই শিক্ষার্থী, শিক্ষার্থীর বাবা ও চাচার বক্তব্য শোনেন আদালত। প্রাথমিকভাবে আদালতের কাছে মনে হয়েছিল, ওই কিশোর শিক্ষার্থী অপরাধী। পুরো শুনানিকালে তাকে দাঁড় করিয়ে রাখেন আদালত। হাইকোর্টের নির্দেশে বিচারিক আদালত থেকে মেয়ে সহপাঠীর জবানবন্দি আনা হয়।
সেই জবানবন্দি পড়ে হাইকোর্ট জানান, কিশোর শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আছে বলে তাদের কাছে মনে হয়নি। যে ধরনের অভিযোগ করা হয়েছে, তা উদ্দেশ্যমূলক মনে হয়েছে। পরে পরীক্ষার্থী বিবেচনা করে ওই কিশোরকে ৮ সপ্তাহের আগাম জামিন দেন হাইকোর্ট।
পরে ওই কিশোরের উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, তুমি চাইলে বড় পুলিশ অফিসার হতে পারবে। তোমার বাবা রাস্তায় ঘুরে ঘুরে মুরগি বিক্রি করে কত কষ্ট করে টাকা উপার্জন করেন। বাবা-মায়ের কথামতো চলতে হবে। বাবা-মায়ের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে। ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে।
আদালত আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, দোয়া করি তুমি বড় মানুষ হও। যদি আমরা বেঁচে থাকি তাহলে বড় অফিসার হয়ে দেখা করতে আসবে।